ঢাকা Thursday, 09 May 2024

সামাজিক প্রথার গণ্ডি ছাড়িয়ে নারীরাই এখানে সর্বেসর্বা

স্টার সংবাদ ডেস্ক

প্রকাশিত: 10:45, 20 October 2023

সামাজিক প্রথার গণ্ডি ছাড়িয়ে নারীরাই এখানে সর্বেসর্বা

গ্রাম মানেই বসতি। আর সেই বসতি গড়ে ওঠে নারী-পুরুষের সমন্বয়ে তৈরি পরিবার ঘিরেই। কিন্তু পৃথিবীতে এমনই এক গ্রাম রয়েছে যেখানে কোনো পুরুষ বাস করেন না। শুধু নারীরাই থাকেন এই গ্রামে। পুরুষতান্ত্রিক সমাজের প্রথা ভেঙে নারীশক্তির অনন্য দৃষ্টান্ত তুলে ধরেছে কেনিয়ার উমোজ নামে এই গ্রাম। সন্তান-সহ প্রায় ৪০০ নারীর বাস এই গ্রামে ।

এ গ্রাম চলে নারীশক্তিতে। হাজার হাজার নির্যাতিতার ঠাঁই এ গ্রামে। সমাজে নির্যাতনের শিকার হয়ে তারা এই পুরুষবর্জিত গ্রামে বাসা বেঁধেছেন। শোষণের নির্মমতাকে পেছনে ফেলে এ গ্রামের নারীরা তৈরি করেছেন নিজস্ব এক পরিচয়। 

প্রায় ৩০ বছর আগের ঘটনা। সাম্বুর সম্প্রদায়ের কয়েকজন নারী গোড়াপত্তন করেন এ গ্রামের। সমাজ থেকে বিচ্যুৎ,পরিবার থেকে বিতাড়িত মহিলারা নিজেদের উদ্যোগে গড়ে তোলেন এই অভয়াশ্রম। তারপর ধীরে ধীরে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নির্যাতিতা, নিপীড়িতারা যোগ দেন এই পরিবারে। তাঁরা এই গ্রামে এসে শুরু করেন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বেঁচে থাকার লড়াই। 

উমোজ গ্রামেরসহ প্রতিষ্ঠাতা জেন নোমুকেন বলেন, একজন মহিলার জীবনের সিদ্ধান্ত একান্তই তাঁর নিজের। তিনি কী করবেন, কার সঙ্গে জীবন কাটাবেন, কীভাবে জীবন কাটাবেন, সেই সিদ্ধান্তের অধিকারী তিনি নিজেই। এজন্য তাঁকে স্বাবলম্বী যেমন হতে হবে, তেমনই প্রতিষ্ঠা করতে হবে নিজস্ব এক জগৎ। 

এক সময় নারীদের আধিপত্য পুরুষতান্ত্রিক সমাজ মানতে পারছিল না। এই অবস্থায় যেসব নারীরা মনে সাহস নিয়ে নিজেদের একটা জগৎ গড়ার তাগিদ অনুভব করেছেন। তারাই এই গ্রাম প্রতিষ্ঠা করেছেন। আর তারপরই আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা তাঁদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। 

এ গ্রামের বাসিন্দারা নিজেদের ভাগ্যবান বলে মনে করেন। এখানে কোনো কাজের জন্য কেউ কাউকে চাপ সৃষ্টি করে না। কোনো অত্যাচারের ভয় নেই এখানে। সন্তানদের নিয়ে এখানে বেশ স্বাচ্ছন্দ্যেই চলে তাদের জীবন। 

এ গ্রামে ছেলে সন্তানরা ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত থাকতে পারেন মায়ের সঙ্গে। তারপরই তাঁকে এ গ্রাম ছাড়তে হয়। এ গ্রামে কোনো পুরুষ রাত্রিযাপন করতে পারেন না। তবে পুরুষরা ঘুরে দেখার সুযোগ পান দিনে। এ গ্রামের জীবনযাত্রা দেখতে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকরা আসেন। 

বিভিন্ন সম্প্রদায় থেকে এলেও উমোজা গ্রামের সবাই একটি পরিবার। এ গ্রামের মহিলারা কৃষিকাজ ছাড়াও গহনা ও পোশাক তৈরি করে বিক্রি করেন। বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে এই গ্রামে, রয়েছে শিশুদের জন্য স্কুল। সমাজিক কুপ্রথার বিরুদ্ধে লড়াই করে স্বতন্ত্র পরিচয় স্থাপন করাই উমোজা গ্রামের মহিলাদের লক্ষ্য।