ঢাকা Saturday, 27 April 2024

দেড় সপ্তাহ পর ঢাবি ক্যাম্পাসে ছাত্রদল

স্টার সংবাদ

প্রকাশিত: 21:40, 3 June 2022

দেড় সপ্তাহ পর ঢাবি ক্যাম্পাসে ছাত্রদল

প্রায় দেড় সপ্তাহ পর (১২ দিন) আজ শুক্রবার (৩ জুন) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে ঢুকেছেন ছাত্রদল নেতাকর্মীরা। স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে তারা ক্যাম্পাসে ঢুকতে পেরেছেন বলে জানা গেছে। এদিকে ছাত্রলীগ কোনো বাধা দেয়নি ছাত্রদলকে ক্যাম্পাসে ঢুকতে। 

ঢাবির ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদভুক্ত ‘গ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় আজ বেলা ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত। এই পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসে নানা কর্মসূচি নেয় ছাত্রলীগ। অন্যদিকে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী, ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা জানাতে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগের ফটকের সামনে অবস্থান নেন ছাত্রদল নেতাকর্মীরা। 

সেখানে উপস্থিত ছিলেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক আকতার হোসেন ও সদস্যসচিব আমানউল্লাহ আমান।

পরীক্ষা শেষে কাজী মোতাহার হোসেন ভবন থেকে বের হওয়া ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের ফুল ও কলম দিয়ে শুভেচ্ছা জানায় ছাত্রদল। ১৫ মিনিটের মধ্যে কর্মসূচি শেষ করে ছাত্রদল নেতাকর্মীরা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগ হয়ে ক্যাম্পাস ছাড়েন।

স্বল্প সময়ের এই কর্মসূচির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ছাত্রদল নেতাকর্মীরা সরকার বা ছাত্রলীগ বিরোধী কোনো স্লোগান দেননি। অন্যদিকে ছাত্রলীগও তাদের কোনো বাধা দেয়নি। 

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, ‘গ’ ইউনিটের পরীক্ষাশেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী মোতাহার হোসেন ভবন থেকে ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা বের হতে শুরু করেন। এ সময় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগের সামনে থেকে মিছিল নিয়ে কাজী মোতাহার হোসেন ভবনের দিকে রওনা দেন ছাত্রদল নেতাকর্মীরা। একসময় পুলিশ তাদের বাধা দিয়ে জানায়, ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের ফুল-কলম দেয়া যাবে না। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বারণ রয়েছে। তখন ছাত্রদলের এক নেতা মোবাইল ফোনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর একেএম গোলাম রব্বানীর সঙ্গে কথা বলেন। পরে ছাত্রদল নেতাকর্মীদের কাজী মোতাহার হোসেন ভবনের সামনে যেতে দেয় পুলিশ।

সেখানে যাওয়ার পর ভবনের পাশের ফুটপাতে রজনীগন্ধা ফুল ও কলম হাতে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ান ছাত্রদল নেতাকর্মীরা। কিন্তু সেখান দিয়ে ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা তেমন আসছিলেন না। তখন ছাত্রদল নেতাকর্মীরা ভবনের মূল ফটকে অবস্থান নিয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে বের হওয়া শিক্ষার্থীদের ফুল ও কলম দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। তারা ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের ছাত্রদলের ‘সুশীতল ছায়াতলে’ আসার আমন্ত্রণ জানান।

দুপুর পৌনে ১টার দিকে ছাত্রদল নেতাকর্মীরা মিছিল করে ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে যান। মিছিলটি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে গিয়ে শেষ হয়। 

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ফটকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সদস্যসচিব আমানউল্লাহ আমান সাংবাদিকদের বলেন, ছাত্রদল শিক্ষা, ঐক্য ও প্রগতির পতাকাবাহী সংগঠন। আমাদের হাতে কলমই থাকে। কলম দিয়েই আমরা প্রতিবাদ করি। আমাদের হাতে কখনোই অস্ত্র ছিল না। ছাত্রদল অস্ত্রের ভাষায় কথা বলে না। অস্ত্রের ভাষায় কথা বলে ছাত্রলীগ। গত কিছুদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের নৈরাজ্যকালে ওই সংগঠনের অনেকের হাতে অস্ত্র দেখা গেছে। প্রতিবছরের মতো এবারো আমরা ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা জানিয়েছি। এই কর্মসূচি পালনে আমরা কিছুটা প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ি।

তিনি আরো বলেন, আজ ক্যাম্পাসে একটি ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করে রাখা হয়েছিল। তবে যতই ভীতিকর পরিস্থিতি থাকুক না কেন, আমরা আমাদের অধিকারচর্চার জন্য প্রাণের ক্যাম্পাসে আসবই। আমরা চেষ্টা করেছি, ক্যাম্পাসে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশের স্বার্থে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা যেন না ঘটে। ছাত্রলীগ তাদের সশস্ত্র অবস্থান থেকে বেরিয়ে আসবে বলে আমরা আশা করি।

ছাত্রদলের বক্তব্য প্রসঙ্গে ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, সামরিক স্বৈরশাসকের সেবাদাস ছাত্রদলের এসব মন্তব্যের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়, তাদের লক্ষ্য ছাত্ররাজনীতি নয়। ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীসহ তাদের অভিভাবকদের প্রয়োজন, প্রত্যাশায় ও সংকটে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা পাশে থেকেছে। এটি নতুন দিনের ছাত্ররাজনীতির প্রমাণ বলে আমরা মনে করি। শিক্ষার্থীবান্ধব ও ভর্তি পরীক্ষার উপযোগী কর্মসূচি দেয়ার জন্য অভিভাবকরা ছাত্রলীগের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। শিক্ষার্থীরা সুন্দরভাবে পরীক্ষা দিয়েছেন। অভিভাবকরা নিজের ঘরের মতো পরিবেশে এখানে অবস্থান করেছেন। এসব কারণেই কি ছাত্রদল একে ভীতিকর পরিবেশ বলছে?

প্রসঙ্গত, গত ২২ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদের এক বক্তব্যের পর ছাত্রলীগ কঠোর অবস্থান নেয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঢুকতে গিয়ে দফায় দফায় হামলার শিকার হয় ছাত্রদল। গত ১২ দিন ধরে ছাত্রদল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঢুকতে পারেনি। 

এদিকে ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে আজ ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে নানা কর্মসূচি ছিল। এগুলোর মধ্যে ছিল ক্যাম্পাসের বিভিন্ন পয়েন্টে স্থাপিত শিক্ষার্থী-সহায়তা ও তথ্যকেন্দ্র থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ, শিক্ষার্থীদের পরিবহনের সুবিধার্থে বিনামূল্যে ‘জয় বাংলা বাইক সার্ভিস’-এর ব্যবস্থা, ছাউনির মাধ্যমে অভিভাবকদের বিশ্রামের সুব্যবস্থা, সুপের পানির ব্যবস্থা, পরীক্ষাকেন্দ্রে নেয়ার অনুপযোগী জিনিসপত্র রাখার ব্যবস্থা, প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য হুইলচেয়ারসহ প্রয়োজনীয় সুবিধা প্রদান, তাৎক্ষণিক চিকিৎসাসেবার জন্য প্রাথমিক চিকিৎসাকেন্দ্র গঠন, মাস্ক বিতরণ, কলমসহ আনুষঙ্গিক শিক্ষা উপকরণ বিতরণ, প্রয়োজন সাপেক্ষে পরীক্ষার আগের রাতে ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের হলে থাকার সুব্যবস্থা প্রভৃতি।