প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি : সংগৃহীত
‘অতি জরুরি’ ভিত্তিতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন জোরদার করার দাবি জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, এ সংকট প্রশ্নে প্রধান আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর নিষ্ক্রিয়তা বাংলাদেশকে মর্মাহত করেছে। অথচ, সীমিত সম্পদ সত্ত্বেও মানবিক দিক বিবেচনা করে বাংলাদেশ শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়েছিল।
নিউইয়র্কে আন্তর্জাতিক অংশীদারদের উচ্চপর্যায়ের এক আলোচনায় তিনি বলেন, ‘আমি বারবার বলেছি, তারা (রোহিঙ্গারা) মিয়ানমারের নাগরিক। সুতরাং, তাদের অবশ্যই নিরাপত্তা ও মর্যাদা নিয়ে জন্মভূমিতেই ফিরে যেতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রোহিঙ্গা সংকট আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্য উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। অতএব, এ ব্যাপারে জরুরি পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।আমি জোর দিয়ে বলতে চাই, এক্ষেত্রে আমরা বাংলাদেশে যা কিছু করছি তা সম্পূর্ণরূপে অস্থায়ী ভিত্তিতে করা হচ্ছে।’
‘রোহিঙ্গাদের জন্মভূমিতে ফিরে যাওয়া নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের যা কিছু করা সম্ভব তা অবশ্যই করতে হবে। তারাও নিজ দেশে ফিরে যেতে চায়,’ যোগ করেন তিনি।
সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা সম্প্রদায়কে নিপীড়নে দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে প্রচার চালাতে গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী। একইসঙ্গে ন্যায়বিচার এবং দেশে প্রত্যাবর্তনে ভুক্তভোগি জনগোষ্ঠীর মধ্যে দৃঢ় আস্থা ফিরিয়ে আনতে এ আহ্বান জানান তিনি।
শেখ হাসিনা আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ভাষণ দেবেন। এর আগে বাংলাদেশের পৃষ্ঠপোষকতায় ‘হাই-লেভেল সাইড ইভেন্ট অন ফরসিবলি ডিসপ্লেস মিয়ানমার ন্যাশনালস (রোহিঙ্গা) ক্রাইসিস : ইম্পারেটিভ ফর এ সাস্টেইনাবল সল্যুশন’ শীর্ষক ভার্চুয়াল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ইউএজিএর গুরুত্বপূর্ণ সাধারণ আলোচনায় এ সংকট তুলে ধরতে ঢাকার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে এর আয়োজন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী জানান, ২০১৭ সালে রোহিঙ্গারা দলে দলে বাংলাদেশে পালিয়ে আসার পর থেকেই এ সংকটের স্থায়ী সমাধানে ধারাবাহিকভাবে ইউএনজিএর অধিবেশনে তিনি সুনির্দিষ্ট বিভিন্ন প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। এ ব্যাপারে মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় যোগাযোগ বজায় রেখেছে আওয়ামী সরকার।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আঞ্চলিক ক্ষেত্রে আমরা চীন ও ভারতসহ প্রধান শক্তিগুলোকে এ সংকট সমাধানে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করেছি। সার্বক্ষণিকভাবে আসিয়ানকে আরো সক্রিয় রাখার চেষ্টা চালিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘বহুপক্ষীয় ক্ষেত্রে আমরা বিশ্বেও গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন দেশ ও জাতিসংঘ সংস্থাগুলোর মনোযোগ আকর্ষণ করে জাতিসংঘ প্রস্তাবের মাধ্যমে বিষয়টি আলোচনার টেবিলে ধরে রেখেছি। তবে দুঃখজনকভাবে ‘দুর্ভাগা, গৃহহীন মিয়ানমারের নাগরিকদের দেশে ফেরাতে চালানো আমাদের প্রচেষ্টা আলোর মুখ দেখেনি।‘এখন পর্যন্ত তাদের একজনও জন্মভূমিতে ফিরে যেতে পারেনি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিগত চার বছর ধরে বাংলাদেশ অনেক আশা নিয়ে অপেক্ষা করে রয়েছে-বাস্তুহারা এসব মানুষ নিরাপদে ও মর্যদা নিয়ে মিয়ানমারে ফিরে যেতে পারবে।তা সত্ত্বেও আমাদের আহ্বান অবহেলিত রয়েছে। প্রত্যাশা অসম্পূর্ণ আছে। এ সংকটের পঞ্চম বছর চলছে। এখনো আমরা রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধানের আশা রাখছি।’
এ মানবিক সংকট সমাধান করা ছিল সম্মিলিত দায়িত্ব এবং বিভিন্ন সীমান্তে এর প্রভাব পড়ছে। তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘এ ব্যাপারে দ্রুত কিছু করতে ব্যর্থ হলে ‘আমাদের সামগ্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা মহাবিপদে পড়বে। প্রত্যাবাসনের অগ্রগতির ঘাটতির কারণে হতাশা বৃদ্ধি পাওয়ায় তাদের অনেকে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছেন। তারা সহজে জঙ্গিবাদী মতাদর্শেও শিকার হচ্ছে। এ ধরনের কর্মকাণ্ড পুরো অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।’
প্রধানমন্ত্রী এ সংকট সমাধানে পাঁচ দফা আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। প্রথমত, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ‘আমাদের সবার জোরালো প্রচেষ্টা’ চালানো প্রয়োজন। দ্বিতীয়ত, প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার অনিশ্চয়তা দূর করতে মিয়ানমারে রাজনৈতিক দৃশ্যপটের পরিবর্তন ঘটাতে হবে। এ সংকট সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টার সংশোধন প্রয়োজন। এছাড়া বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষিতে আসিয়ানের জোরদার প্রচেষ্টা দেখতে চান তিনি। সূত্র : বাসস