ঢাকা Wednesday, 08 May 2024

খালাদের আচরণে মর্মাহত ৩ বোন বাবার কাছে থাকতে চান

স্টার সংবাদ

প্রকাশিত: 20:51, 20 November 2021

আপডেট: 20:51, 20 November 2021

খালাদের আচরণে মর্মাহত ৩ বোন বাবার কাছে থাকতে চান

ফাইল ছবি

মা মারা যাওয়ার পর বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেন। তিন বোন থেকে যান ঢাকায় খালাদের কাছে। কিন্তু যেমনটা তারা ভেবেছিলেন তেমন হয়নি। খালাদের অসংযত আচরণ ও নেতিবাচক কর্মকাণ্ডে মর্মাহত হয়ে তারা সিদ্ধান্ত নেন চলে যাবেন বাবার কাছে। করলেনও তাই, চলে গেলেন যশোরে অসুস্থ বাবার কাছে। এখন তারা সেখানেই থাকতে চান। 

এই তিন বোন হলেন -  রোকেয়া (১৮), জয়নব আরা (১৭) ও খাদিজা আরা (১৬)। রাজধানীর আদাবর থেকে গত ১৮ নভেম্বর তারা ‘নিখোঁজ’ বলে থানায় জিডি করেন তাদের বড় খালা সাজিয়া নওশীন। তিনি সে সময় গণমাধ্যমকে জানান, তিন বোন টিকটকে আসক্ত ছিল। তার সন্দেহ, তারা কোনো প্রতারক চক্রের হাতে পড়েছে।   

এদিকে এমন সংবাদ পাওয়ার পর থেকেই পুলিশের বিভিন্ন উইং ওই তিন বোনের সন্ধানে অনুসন্ধান চালাতে শুরু করে। একসময় জানা যায়, ওই তিন তরুণী রয়েছেন তাদের বাবার কাছে। বর্তমানে তারা পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, তিন বোনকে শনিবার (২০ নভেম্বর) আদালতে সোপর্দ করা হবে। আদালতে তারা নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরবেন। রোববার দুই বোনের এসএসসি পরীক্ষা রয়েছে, তারা পরীক্ষায় অংশ নিতে চান। আদালত এ বিষয়ে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেবেন। আমরা সেই অনুযায়ী কাজ করব। তাদের সব ধরনের নিরাপত্তা দেয়া হবে।

শনিবার রাজধানীর শ্যামলীতে ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব তথ্য জানান।

ডিসি বিপ্লব কুমার বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, অসুস্থ বাবার কাছে তারা গিয়েছিলেন। এখন তারা খালা নয়, বাবার কাছেই থাকতে চান। কারণ হিসেবে বলেছেন, দুই খালার কাছে তারা যেমন ব্যবহার আশা করেছিলেন, সেটি পাননি। তাই অসুস্থ বাবার কাছে চলে গিয়েছিলেন।

তিনি আরো বলেন, নিখোঁজ তিন বোনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে  জানতে পেরেছি, ২০১২ সালে বাবা-মায়ের বিচ্ছেদের পর তারা মায়ের সঙ্গে থাকতেন। পরে মা ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তখন থেকে তারা দুই খালার  কাছে রয়েছেন। কিন্তু বাবার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারতেন না। দুই খালার কাছে তিন বোন থাকলেও বিভিন্ন সময়ে খালাদের নেতিবাচক কর্মকাণ্ডে তাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। সেই ক্ষোভের কারণে তারা বাবার কাছে চলে যান।

বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, দীর্ঘ ৮ থেকে ৯ বছর পর তিন বোন তাদের বাবার সঙ্গে দেখা করেছেন। তাদের বাবা একজন স্কুলশিক্ষক। দীর্ঘদিন ধরে তিনি অসুস্থ, বর্তমানে শয্যাশায়ী। তবে মাঝেমধ্যে দাদির মোবাইল নম্বরে তিন বোনের কথা হতো। বাবার কাছে যশোরে যাওয়ার জন্য দাদি তাদের বিকাশের মাধ্যমে ২ হাজার টাকা পাঠায়। পরবর্তীতে ১৮ নভেম্বর সকালে আদাবরের খালার বাসা থেকে বের হয়ে তারা যশোরের উদ্দেশে রওনা দেন। বাসা থেকে বের হয়ে তারা গাবতলীতে জননী পরিবহনের একটি বাসে করে যশোরে যান। সেখান থেকে হামিদপুরে তাদের বাবার বাসায় পৌঁছান।

এদিকে আদাবরে তাদের খালার করা সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হওয়ার পর পরিবারের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা যোগাযোগ করলে একটি ফোন নম্বর পায়। সেই ফোন নম্বরের ভিত্তিতেই দাদাবাড়িতে বাবার সঙ্গে দেখা করার জন্য তিন বোন যশোরে অবস্থান করছে বলে নিশ্চিত হন পুলিশ কর্মকর্তারা।

খালা বলেছিলেন, তিন বোন টিকটকে আসক্ত ছিল - এ প্রসঙ্গে ডিসি বিপ্লব কুমার বলেন, আমরা তাদের কাছে কোনো মোবাইল ফোন পাইনি। আর তার খালার গণমাধ্যমে বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে সত্যতা এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। তিন বোনের অনেকটাই ক্ষোভ রয়েছে খালাদের ওপর। খালাদের কাছে আশানুরূপ ব্যবহার পাননি বলেও জানিয়েছেন তারা।

তিন বোনকে শনাক্ত কিংবা উদ্ধার নিয়ে পুলিশ এবং র‌্যাবের বক্তব্যের বিষয়ে বিপ্লব কুমার বলেন, কোন একটি ঘটনা ঘটলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিটি সংস্থাই ছায়া তদন্ত করে। আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিটি বিভাগই ভ্রাতৃপ্রতিম। আমাদের মধ্যে বিতর্ক সৃষ্টির কোনো কারণ নেই। আমরা যশোর থেকে তিন বোনকে উদ্ধার করে রাজধানীতে এনেছি।

গত ১৮ নভেম্বর আদাবরে খালার বাসা থেকে কাউকে না বলে বেরিয়ে যান তিন বোন। এ সময় তারা এসএসসি পরীক্ষার প্রবেশপত্র, নিবন্ধন কার্ড, সনদ এবং ব্যাগ সঙ্গে নিয়ে যান।