ঢাকা Saturday, 27 April 2024

ছেলের বই কিনতে ভ্যান বিক্রি করলেন বাবা, নতুন কিনে দিলেন ডিসি

পঞ্চগড় প্রতিনিধি 

প্রকাশিত: 01:47, 2 February 2023

ছেলের বই কিনতে ভ্যান বিক্রি করলেন বাবা, নতুন কিনে দিলেন ডিসি

পঞ্চগড়ে এক মেধাবী শিক্ষার্থীর অসহায় বাবা হামিদুল ইসলাম। একমাত্র ছেলে মেহেদী হাসান বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) সুযোগ পেয়েছিলেন। মেধাবী সন্তানকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করার জন্য ছেলের নতুন বই কেনাসহ আনুষঙ্গিক খরচ মেটাতে উপার্জনের একমাত্র অবলম্বন ব্যাটারিচালিত ভ্যান বিক্রি করে দেন তিনি।

অবশ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জেলা প্রশাসক (ডিসি) বরাবরে আবেদন করে ১০ হাজার টাকা সহায়তা পেয়েছিলেন তিনি। ছেলেকে উচ্চশিক্ষিত করে গড়ে তোলার সহায়তার জন্য আবারও জেলা প্রশাসকের দ্বারস্থ হন হামিদুল। তার কথা শুনে এবার জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম তাকে একটি ভ্যান কিনে দিয়েছেন। 

বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) ভ্যানটি প্রদানের সময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাজস্ব দীপঙ্কর রায়সহ প্রশাসনের কর্মকর্তা ও হামিদুলের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। আর্থিক সহায়তা চাইতে গিয়ে উপার্জনের অবলম্বন ফিরে পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন হামিদুল ইসলাম।

হামিদুল ইসলামের বাড়ি উপজেলা সদরের ধাক্কামারা ইউনিয়নের কমলাপুর এলাকায়। মাত্র দুই শতাংশের ভিটেমাটিতে স্ত্রী, এক কন্যা ও ছেলে মেহেদীকে নিয়ে তার সংসার। 

ছোটবেলা থেকেই মেধার স্বাক্ষর রেখে আসছিলেন মেহেদী। পরবর্তীকালে  তার শিক্ষকদের অনুপ্রেরণা এবং সন্তানের লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ দেখে তাদের উচ্চশিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে বড় মানুষ করে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন হামিদুল। এক্ষেত্রে আর্থিক অনটন বড় প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়ায় তার সামনে। 

এদিকে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে কর্মসংস্থানসহ ছেলেমেয়েদের উচ্চশিক্ষার খরচ জোগানোর সহায়তার আশ্বাসে সাহস পেয়েছেন এই অসহায় পিতা। 

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বলেন, আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির সুযোগ পেয়েও টাকার অভাবে দিশেহারা ছিলাম। এরপর স্থানীয় এক বন্ধুর পরামর্শে জেলা প্রশাসনের গণশুনানিতে আর্থিক সাহায্যের আবেদন নিয়ে গেলে তিনি আমাকে ভর্তির জন্য তাৎক্ষণিক ১০ হাজার টাকা দেন। ডিসি স্যার আমার মতো অসংখ্য শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির জন্য টাকা দিয়েছেন। ডিসি স্যারের প্রতি আমি আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবো। 

হামিদুল ইসলাম বলেন, আমার দুই ছেলেমেয়ে ছোটবেলা থেকেই লেখাপড়ায় ভালো। স্কুলের শিক্ষকরাও বলতেন। এজন্য তাদের খরচ জোগাতে আমি ভ্যান বিক্রি করে দিই। পরে একটি ভাড়ায় চালিত ভ্যান নিয়ে দৈনিক একশ থেকে দেড়শ টাকা আয় হতো। এ দিয়ে দুই বেলা ঠিকমতো খাবার হতো না। গণশুনানিতে আমার সব কথা শুনে ডিসি সাহেব আমাকে একটি নতুন ভ্যান কিনে দেন। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য তিনি ১০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। আমার সন্তানদের উচ্চশিক্ষিত করে গড়ে তুলতে তিনি আরো সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন।   

প্রসঙ্গত, পঞ্চগড় জেলা প্রশাসকের অফিসে প্রতি বুধবার গণশুনানি হয়। এদিন প্রত্যন্ত এলাকার মেধাবী শিক্ষার্থী, দুস্থ, অসহায়, গরিব রোগীরা গণশুনানিতে তাদের নানান সমস্যার কথা বলেন। জেলা প্রশাসক সবার কথা শোনার পর যথাসাধ্য সাহায্য করার চেষ্টা করেন। 

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতি বুধবার গণশুনানির দিন সাধারণ মানুষের জন্য নির্ধারিত করা হয়েছে। এদিন ভ্যানচালক হামিদুলের মতো অনেকেই আসেন নানা সমস্যা নিয়ে। বিশেষ করে অসংখ্য মেধাবী শিক্ষার্থী আসেন বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল কলেজে ভর্তিসহ বই কেনার আর্থিক সাহায্যের আবেদন নিয়ে। আমার চেষ্টা থাকে মেধাবী শিক্ষার্থীর উচ্চশিক্ষা এবং দুস্থদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রাপ্ত বিশেষ অনুদান, জাতীয় সমাজকল্যাণ পরিষদ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দসহ জেলা প্রশাসক শিক্ষা বৃত্তি থেকে এসব গরিব মেধাবী ও দুস্থদের আর্থিক সহায়তা করা হয়। 

তিনি বলেন, এটা আসলে সেই অর্থে জনসেবা না। জেলা প্রশাসনের রুটিন ওয়ার্ক বলতেই আমি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি।