মজুরি হিসেবে টাকা দিয়ে নয়, খড়ের বিনিময়ে ধান কেটে দিচ্ছে খড় ব্যবসায়ী শ্রমিকরা। নতুন এই বিনিময় পদ্ধতি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলায়। এই পদ্ধতিতে খড় ব্যবসায়ী শ্রমিকরা নিজ খরচে ধান কেটে মাড়াই করে কৃষকের গোলায় ধান পৌঁছে দিচ্ছেন। মজুরী হিসেবে শ্রমিকরা আমন ধানের খড়গুলো নিয়ে গো-খাদ্য হিসেবে বাজারে বিক্রি করছেন।
জানা যায়, ফুলবাড়ী উপজেলায় বর্তমানে একজন শ্রমিকের ধান কাটার মজুরি সর্বনিম্ন ৫শ টাকা। প্রতি একর জমির কাটার জন্য ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা শ্রমিক খরচ হয়। তাছাড়াও সময় মতো ধান কাটার শ্রমিক পাওয়া যায় না। একই সাথে কাঁচা খড় নিয়ে কৃষককে নানা ভোগান্তি পোহাতে হয়।
অপরদিকে কোন ঝুট ঝামেলা ছাড়াই খড় ব্যবসায়ীরা তাদের নিজস্ব লোক দিয়ে ধান কেটে মাড়াই করে দিচ্ছেন। ফলে ধান কাটা এবং মাড়াইয়ে শ্রমিক বাবদ যে পরিমাণ খরচ হতো তা বেচে যাচ্ছে কৃষকের। ফলে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে খড়ের বিনিময়ে ধান কাটা কার্যক্রম।
উপজেলার আলাদিপুর, এলুয়াড়ী, শিবনগর ইউপির আদর্শ কলেজপাড়া, গোপালপুর, দাদপুরসহ বিভিন্ন এলাকার উঁচু জমিতে উন্নত জাতের হাইব্রিড ধান চাষ করা হয়। এই ধানের বৈশিষ্ট্য হল খুব কম সময়ে পাকে। তাই এসব ধান আগাম কাটতে হয়। গাছ কাঁচা থাকতেই ধান পাকে। ফলে এর খড় গো-খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
সরেজমিনে উপজেলার শিবনগর ইউনিয়নের দাদপুর মালিপাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, আগাম জাতের আমন ধান কাটতে ব্যস্ত সময় পার করছেন শ্রমিকরা। তারা জানান, গৃহস্থের (মালিকের) কাছে এক একর জমি ঠিকা(চুক্তি) নিয়েছেন তারা। সব ধান কেটে মাড়াই করে দিবেন সেই সাথে ৫হাজার টাকাও দিবেন। বিনিময় হিসেবে যাবতীয় খড় তারা নিয়ে বাজারে বিক্রি করবেন। এতে একদিকে গৃহস্থ (জমির মালিক) কে ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে না, অন্যদিকে ব্যবসায়ীরাও খড় বিক্রয় করে লাভবান হচ্ছেন।
কৃষক বাবু মিয়া বলেন, এক একর জমি খড়ের বিনিময়ে চুক্তিতে দিয়েছি। তারা ৫হাজার টাকাও দিবে। তারা ধান কেটে মাড়াই করে বস্তাজাত করে দিবে। এতে আমার শ্রমিকের মজুরি বাবদ অর্থ সাশ্রয় হচ্ছে,ঝামেলাও নেই।
কৃষক নূর আমিন বলেন, অন্যান্য বছর এই সময় একবোঝা (২০টি) খড়ের আটি ১০০ থেকে ১২০ টাকা বিক্রি হলেও বৃষ্টি বাদল না থাকায় এবার ৪০/৫০টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। প্রতি একরে ২৫০ হতে ৩০০ বোঝা খড় হয়। খড়ের দাম কম থাকায় খড়ের বিনিময়ে ধান কর্তন বেশ লাভজনক মনে হচ্ছে।
কথা হয় পার্শবর্তী নবাবগঞ্জ উপজেলার ভাগুলপুর থেকে আসা খড় ব্যবসায়ী আরিফুল ইসলামের সাথে তিনি জানান, পাঁচ বছর ধরে এভাবেই ধান কাটা মাড়াইয়ের চুক্তি নেই। খড়ের বিনিময়ে ধান কেটে মাড়াই করে কৃষকের ঘরে পৌঁছে দেই। খড়ের বাজার অনুযায়ী প্রতি একরে ৫ থেকে ৬হাজার টাকাও দেয়া হয় কৃষককে। প্রাপ্ত খড় গরুর খাদ্য হিসেবে বাজারে বিক্রি করি। আমাদের দলে ৮জন শ্রমিক রয়েছে। খড় বিক্রয়ের টাকা যাবতীয় খরচ বাদ দিয়ে ভাগ করে নেই। এতে আমরাও লাভবান হচ্ছি, কৃষকও লাভবান হচ্ছে। প্রথম দিকে কৃষক চুক্তি দিতে রাজি না হলেও এখন অনেকে আগ্রহী হচ্ছেন।