ঢাকা Friday, 26 April 2024

বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা ‘উচ্চাভিলাষী ও বাস্তবসম্মত নয়’: সিপিডি

স্টার সংবাদ

প্রকাশিত: 12:29, 2 June 2023

আপডেট: 19:14, 2 June 2023

বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা ‘উচ্চাভিলাষী ও বাস্তবসম্মত নয়’: সিপিডি

ছবি: সংগৃহীত

প্রস্তাবিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে বিভিন্ন সূচকের যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তা ‘উচ্চবিলাসী বাস্তবসম্মত নয়বলে মন্তব্য করেছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)

শুক্রবার ( জুন) সকালে রাজধানীর লেকশোর হোটেলে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালাগ (সিপিডি) আয়োজিতজাতীয় বাজেট ২০২৩-২৪, সিপিডির পর্যালোচনাশীর্ষক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে সংগঠনটির পক্ষ থেকে মন্তব্য এসেছে। ব্রিফিংয়ে সংগঠনটির পর্যালোচনা তুলে ধরছেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। এসময় তিনি এই মন্তব্য করেন।

বাজেটে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত পালনের আভাস স্পষ্ট বলে ফাহমিদা খাতুন বলেন, রাজস্ব ব্যাংক খাত, মূল্যস্ফীতি, রপ্তানি, বিদ্যুৎ জ্বালানি, ডলার সংকটসহ নানা কারণে দেশের সামাাগ্রিক অর্থনীতি ভেঙ্গে পড়েছে। এবারের বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি, বার্ষিক উন্নয়ন বেসরকারি বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা যে চমক দেখানো হয়েছে তা উচ্চাভিলাষী, বাস্তবসম্মত নয়।

তিনি বলেন, বর্তমানে চ্যালেঞ্জিং সময় পার করছে দেশের অর্থনীতি। বাংলাদেশের অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ক্রমেই দূর্বল হয়ে পড়ছে। এই কঠিন সময়ে বাজেটে কঠিন কিছু ব্যবস্থা নেওয়া সুযোগ ছিল কিন্তু তা নেওয়া হয়নি।

এদিকে, যাদের আয় করমুক্ত আয়সীমার নিচে তাদের করসনদপত্র পেতে নূন্যতম ২ হাজার টাকা কর দেওয়ার উদ্যোগ 'বৈষম্যমূলক ও সাংঘর্ষিক'। এটি অন্যায্য। এটি সামগ্রিক কর কাঠামোর সঙ্গেই অসামঞ্জস্যপূর্ণ। এমন মন্তব্য করেছেন ফাহমিদা খাতুন।

ব্রিফিংয়ে ফাহমিদা খাতুন বলেন, ব্যক্তিখাতের কর কাঠামোতে করমুক্ত আয়সীমা ৩ থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা করা হয়েছে এটি একটি ভালো বিষয়। নারী, প্রবীণসহ সবার ক্ষেত্রে করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো হয়েছে, সেটিও ভালো বিষয়৷ একদিকে করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো হয়েছে, আরেকটি করমুক্ত আয়সীমার নিচে যারা তারা যদি ৩৮ টি সরকারি সেবা নিতে যায় তাকে রিটার্ন সার্টিফিকেটে পেতে ২ হাজার টাকা কর দিতে হবে, এটি বৈষম্যমূলক ও সাংঘর্ষিক। কর কাঠামোর মূল উদ্দেশ্যটিই কিন্তু নষ্ট হয়ে গেল।

তিনি বলেন, আবার ধনীদের সম্পদে আরো বেশি সারচার্জে ছাড় দেওয়া হয়েছে। এখানে দেখা যাচ্ছে ধনীদের সুযোগ দিয়ে নিম্ন শ্রেণীর উপর চাপ বাড়ানো হয়েছে। করমুক্ত আয়ের সীমার নিচে যারা তাদের রিটার্ন দাখিলে ২ হাজার টাকার কর দেওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ রুপে অন্যায্য ও বৈষম্যমূলক। এটি তুলে দেওয়ার দাবি জানাই।

ফাহমিদা খাতুন আরো বলেন, বাজেট ঘটতির অর্থায়ন কোথা থেকে হবে? চলতি অর্থবছরেও ব্যাংক থেকে বিরাট অংকের ঋণ নেওয়া হয়েছে। ব্যাংক নোট ছাপিয়ে ঋণ নেওয়া হয়েছে। সেটি যদি অব্যাহত থাকে তাহলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবেনা।

ব্রিফিংয়ে আরো উপস্থিত আছেন সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম ও যেষ্ঠ্য গবেষক তৌফিকুল ইসলাম খান।

এর আগে বৃহস্পতিবার ( জুন) বিকেল ৩টায় জাতীয় সংসদেউন্নয়নের দেড় দশক পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাশিরোনামে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল।

অর্থমন্ত্রী আগামী অর্থবছরের বাজেটের জন্য ব্যয় ধরেছেন লাখ ৬১ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অনুপাতে বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ১৫ দশমিক শতাংশ। জিডিপি প্রাক্কলন করা হয়েছে ৫০ লাখ হাজার ৭৮২ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরেও জিডিপির ১৫ দশমিক শতাংশ ধরে লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট দেওয়া হয়। চলতি বাজেটের তুলনায় প্রস্তাবিত বাজেটের আকার বাড়ানো হয়েছে ৮৩ হাজার ৭২১ কোটি টাকা। এতে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরা হয় সাড়ে শতাংশ আর মূল্যস্ফীতি শতাংশের মধ্যে রাখার আশা প্রকাশ করেন তিনি।

অর্থমন্ত্রী ১৯৮ পৃষ্ঠার বাজেট বক্তব্যে বাজেটের ব্যয়ের বিপরীতে লাখ কোটি টাকার রাজস্ব আয়ের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) নিয়ন্ত্রিত কর থেকে লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা, এনবিআর-বহির্ভূত কর থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা এবং কর ব্যতীত রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫০ হাজার কোটি টাকা। ছাড়াও বৈদেশিক অনুদান হিসেবে আসবে হাজার ৯০০ কোটি টাকা। অনুদানসহ মোট আয়ের লক্ষ্যমাত্রা লাখ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। চলতি বাজেটে মোট রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা ছিল লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা।

বাজেটে অনুদান ছাড়া মোট ঘাটতি ধরা হয় লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। আর অনুদানসহ ঘাটতি ধরা হয় লাখ ৫৭ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা। বাজেট ঘাটতি জিডিপির দশমিক শতাংশ।

ঘাটতি পূরণে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে মোট লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। এর মধ্যে দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে ঋণ নেওয়া হবে লাখ ৩২ হাজার ৩২ কোটি টাকা; সঞ্চয়পত্র থেকে ১৮ হাজার এবং অন্যান্য খাত থেকে নেওয়া হবে হাজার কোটি টাকা। বৈদেশিক ঋণ নেওয়া হবে লাখ হাজার ৪৯০ কোটি টাকার।