ঢাকা Sunday, 05 May 2024

শ্রমিকদের খাদ্য সহায়তার স্লিপ নিয়ে কৃষক লীগ নেতার বাণিজ্য

মোংলা (বাগেরহাট) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: 17:10, 6 April 2024

শ্রমিকদের খাদ্য সহায়তার স্লিপ নিয়ে কৃষক লীগ নেতার বাণিজ্য

পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে প্রতিবছর মোংলা বন্দরে কর্মরত শ্রমিকদের খাদ্য সহায়তা দিয়ে থাকেন বন্দর ব্যবহারকারীরা। এবারো ৩ হাজার ১৫০ জন শ্রমিকের মাঝে খাদ্য সহায়তা দিতে বিশেষ ‘স্লিপ’ তৈরি করে তা শ্রমিকদের হাতে তুলে দেয়ার কথা। কিন্তু বন্দরের প্রকৃত শ্রমিকের হাতে কাঙ্ক্ষিত সেই স্লিপ ঠিকমতো পৌঁছেনি বলে জানা গেছে। 

অভিযোগ উঠেছে, সেই স্লিপ চলে গেছে মোংলা পৌর কৃষক লীগের সভাপতি আসলাম হোসেনের হাতে। তিনি শ্রমিকদের জন্য বরাদ্দকৃত সেই স্লিপ তার দলের অনুসারীদের কাছে এক হাজার টাকার বিনিময়ে দিয়ে রাজনীতিতে জনপ্রিয় নেতা হতে চেয়েছিলেন বলে জানা যায়। কিন্তু তার সেই আশা পূরণ হয়নি। উল্টো এখন তিনি ‘নিন্দিত’ই হচ্ছেন বেশি। 

কৃষক লীগ নেতা আসলামের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের বিষয়ে ক্ষোভ ঝেড়ে মোংলা বন্দরের শ্রমিক সর্দার আবুল হোসেন ও সুকুমার মন্ডল বলেন, শ্রমিকদের খাবার মেরে দিয়ে জনপ্রিয় নেতা হওয়া যায় না। প্রতিবছর মোংলা বন্দর বার্থ ও শিপ অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে শ্রমিকদের ঈদ উপলক্ষে বিশেষ খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়। এটা শ্রমিকদের হক। আর সেই হক মেরে দিলে আল্লাহ তাকে পরকালেও ছাড় দেবে না। 

কৃষক লীগ নেতা আসলাম এর আগেও ত্রাণের স্লিপ নিয়ে বাণিজ্যসহ নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ড করে মোংলা ছেড়ে পালিয়েছেন বলেও জানান এই শ্রমিক নেতারা। 

মোংলা বন্দরে কর্মরত শ্রমিক মো. বাবুল আকন, মফিজ খান ও বেল্লাল হোসেন বলেন, আসলাম একজন ধুরন্ধর বাটপার ধরনের লোক। যেখানে সুবিধা সেখানেই ইঁদুরের মতো মাটি খুঁড়ে ঢুকে পড়েন। মানুষের সঙ্গে প্রতারণা ও বাটপারি করতে নিজের সুবিধার জন্য নানা কৌশল করে পৌর কৃষক লীগের সভাপতি হয়েছেন। এরপর মোংলা বন্দরে শ্রমিকদের জন্য বিভিন্ন সময়ে আসা বিশেষ খাদ্য সহায়তার দিকে লোলুপ দৃষ্টি পড়ে তার। এজন্য বন্দরের শ্রমিক ঠিকাদার (স্টিভিডরিং) প্রতিষ্ঠান ‘মক্কা মদিনা এন্টারপ্রাইজে’ অস্থায়ী সর্দারের চাকরি নেন। 

শ্রমিকরা আরো বলেন, এই চাকরি নেয়ার পর নানা সময়ে অযৌক্তিক দাবি নিয়ে তিনি শ্রমিকদের আন্দোলনে নামাতে চেষ্টা করেন। কিন্তু তাতে শ্রমিকরা সাড়া দেয়নি।

তারা আরো বলেন, অযৌক্তিক দাবি নিয়ে আন্দোলন করলে এই সচল বন্দর আবার অচল হয়ে পড়বে। তখন শ্রমিকদের না খেয়ে থাকতে হবে৷ আর এই আন্দোলনের জন্য কৃষক লীগ নেতা আসলাম হোসেনের উস্কানিতে সাড়া না দেয়ায় শ্রমিকদের জন্য আসা খাদ্য সহায়তার স্লিপ নিয়ে এখন রাজনীতি করছেন তিনি। শ্রমিকদের জন্য খাদ্যের স্লিপ টাকার বিনিময়ে বাইরে বিক্রি করে দিচ্ছেন। 

এ প্রসঙ্গে মোংলা বন্দর শ্রমিক কর্মচারী সংঘের সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক সেন্টু বলেন, আসলাম হোসেন যত বড়ই নেতা হোন না কেন, শ্রমিকদের খাদ্যের স্লিপ নিয়ে নয়ছয় করলে তার বিরুদ্ধে প্রশাসনের মাধ্যমে কঠোর ব্যবস্থা নেয়াসহ এই বন্দর থেকে তাকে বিতাড়িত করা হবে।

মোংলা বন্দর বার্থ ও শিপ অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি সৈয়দ জাহিদ হোসেন বলেন, আমরা যারা বন্দর ব্যবহারকারী আছি, তারা সবাই শ্রমিকদের স্বার্থ নিয়ে কাজ করি। শ্রমিকদের ভালোমন্দ ও বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিয়ে তাদের সচ্ছল রাখার চেষ্টা করি। এজন্য প্রতি ঈদের মতো এবারো তাদের জন্য খাদ্য সহায়তা দিচ্ছি৷ কিন্তু শ্রমিকদের এই খাদ্যের স্লিপ নিয়ে কোনো সর্দার প্রকৃত শ্রমিকদের না দিয়ে অন্য কোথাও বিক্রি বা স্বজনপ্রীতি করলে তাকে সংশ্লিষ্ট কোম্পানি থেকে ছাঁটাই করা হবে। একই সঙ্গে তার বিরুদ্ধে অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।  

এসব অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে শ্রমিক সর্দার ও পৌর কৃষক লীগের সভাপতি আসলাম হোসেন বলেন, এসব অভিযোগ মিথ্যা। এমন কোনো কাজ করিনি, এটা অসত্য অবান্তর।