ঢাকা Wednesday, 01 May 2024

মুক্তিপণের বিনিময়ে নাবিকদের মুক্তি : কেএসআরএম

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি

প্রকাশিত: 16:00, 14 April 2024

মুক্তিপণের বিনিময়ে নাবিকদের মুক্তি : কেএসআরএম

ছবি : সংগৃহীত

মুক্তিপণের বিনিময়েই দীর্ঘ ৩১ দিন পর সোমলিয়া জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হওয়া বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহর নাবিকদের উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জাহাজের মালিকানায় থাকা কেএসআরএমের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার জাহান রাহাত।

রোববার (১৪ এপ্রিল) দুপুরে চট্টগ্রামের কেএসআরএমের করপোরেট কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান তিনি হয়।

শাহরিয়ার জাহান রাহাত বলেন, সরকার ও জাহাজের মালিকপক্ষের চেষ্টায় দস্যুদের কবল থেকে জাহাজসহ জিম্মি নাবিকদের সুস্থভাবে মুক্ত করা সম্ভব হয়েছে। বলে জানিয়েছেন কেএসআরএমের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার জাহান রাহাত।

তিনি আরো বলেন সোমালিয়ার সময় শনিবার দিবাগত রাত ১২টায় এবং বাংলাদেশ সময় ভোর ৩টায় নাবিকদের মুক্তির পর এমভি আবদুল্লাহ জাহাজ থেকে দস্যুরা নেমে যায়। এ সময় জাহাজে থাকা ৬৫ জন দস্যু জাহাজ থেকে বোটে করে নেমে গেছে। এরপর জাহাজটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের আল হারমিয়া বন্দরের উদ্দেশে রওনা হয়। এ সময় এমভি আবদুল্লাহর দুই পাশে দুটি ইউরোপীয় যুদ্ধজাহাজ পাহারা দিয়ে সোমালিয়া উপকূল ত্যাগ করে।

তিনি আরো বলেন, ১৪ বছর আগে এমভি জাহান মণি নামে সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল আমাদের জাহাজ। ওই জাহাজটি দস্যুদের কবল থেকে ছাড়িয়ে নিতে ১০০ দিন সময় লেগে যায়। অতীত অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এবার অল্প সময়ের মধ্যে ২৩ নাভিককে ছাড়িয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। সব নাবিক সুস্থ ও ভালো আছেন। জাহাজটি আগামী ২০ এপ্রিল নাগাদ দুবাইয়ে পৌঁছাবে। এরপর তাদের মতামত নেওয়া হবে। তারা দেশে ফিরতে চাইলে নিয়ে আসা হবে। তা না হলে জাহাজটি যখন চট্টগ্রামে আসবে তখন তারা দেশে ফিরতে পারবেন।

কেএসআরএম গ্রুপের প্রধান নির্বাহী মেহেরুল করিম বলেন, সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার দস্যুদের সঙ্গে আমাদের সমঝোতা বা চুক্তি হয়। চুক্তিতে তৃতীয় কোনও পক্ষ ছিল না। আমাদের সঙ্গে সরাসরি সমঝোতা হয়েছে। দস্যুদের মুক্তিপণ দেওয়া হয়েছে। তবে কী পরিমাণ এবং কীভাবে মুক্তিপণ দেওয়া হয়েছে তা জানানো সম্ভব নয়। কেননা জাহাজসহ নাবিকদের ফিরিয়ে আনতে বিভিন্ন দেশের আইন মানা হয়েছে। যা হয়েছে সবই আইন মেনে করা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, আমি উদ্ধার প্রক্রিয়া হ্যান্ডেলিংয়ের জন্য জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে মনোনীত প্রতিনিধি। আমাদের সঙ্গে ওদের কনফারেন্সিয়াল অ্যাগ্রিমেন্ট হয়েছে মুক্তিপণের বিষয়ে আলোচনা না করার জন্য। সেই অ্যাগ্রিমেন্ট অনুযায়ী আমি আপনাদের সঙ্গে কিছু শেয়ার করতে পারব না। কারণ এটা আমি সই করেছি। উদ্ধার প্রক্রিয়ায় আমরা আমেরিকান নিয়ম মেনেছি এবং ইউকে (যুক্তরাজ্য) ও সোমালিয়ার নিয়ম মেনেছি। ফাইনালি কেনিয়ার নিয়মও মেনেছি। সবার সঙ্গে আমাদের অ্যাগ্রিমেন্ট করা আছে এ বিষয়ে আলোচনা না করার জন্য। তবে আমি আবার বলি, আমরা সবকিছু আইন মেনে করেছি।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে কেএসআরএম গ্রুপের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক করিম উদ্দিন, সরওয়ার জাহান রোকন, গণমাধ্যম উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, এমভি আব্দুল্লাহ জাহাজটি কবির গ্রুপের এস আর শিপিংয়ের মালিকানাধীন। এসআর শিপিং সূত্র জানিয়েছে, এমভি আব্দুল্লাহ জাহাজে প্রায় ৫৫ হাজার মেট্রিক টন কয়লা আছে। গত ৪ মার্চ আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিকের মাপুটো বন্দর থেকে এসব কয়লা নিয়ে যাত্রা শুরু করে জাহাজটি। ১৯ মার্চ সেটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের হামরিয়াহ বন্দরে পৌঁছানোর কথা ছিল। এর মধ্যে ১২ মার্চ দুপুর দেড়টার দিকে ভারত মহাসাগরের জলদস্যুর কবলে পড়ে জাহাজটি। অর্থাৎ ভাড়ার বিনিময়ে মোজাম্বিক থেকে দুবাইয়ের আমদানিকারকের কাছে কয়লা পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব ছিল জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহর।

এই প্রতিষ্ঠানটির অধীনে মোট ২৪টি জাহাজের মধ্যে সর্বশেষ যুক্ত হয় জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ। ২০১৬ সালে তৈরি এই বাল্ক কেরিয়ারটির দৈর্ঘ্য ১৮৯ দশমিক ৯৩ মিটার এবং প্রস্থ ৩২ দশমিক ২৬ মিটার। ড্রাফট ১১ মিটারের কিছু বেশি। গত বছর জাহাজটি এসআর শিপিং কিনে নেওয়ার আগে এটির নাম ছিল গোল্ডেন হক। মালিকানা পরিবর্তনের পর নতুন নাম হয় এমভি আব্দুল্লাহ।