ঢাকা Saturday, 27 April 2024

মানুষের চামড়া দিয়ে বাঁধানো বইয়ের মলাট সরালো হার্ভার্ড 

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশিত: 15:45, 29 March 2024

মানুষের চামড়া দিয়ে বাঁধানো বইয়ের মলাট সরালো হার্ভার্ড 

বাম থেকে ‘ডেস্টিনিজ অফ দ্য সোল’ বইয়ের প্রথম পাতা, লেখক আর্সেন হোসায়ের ও বইটির মানুষের চামড়ার মলাট

মানুষের চামড়া দিয়ে একটি বই বাঁধানো হয়েছিল আজ থেকে প্রায় ৯০ বছর আগে। সেই বইটি সংরক্ষিত ছিল যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি লাইব্রেরিতে। সম্প্রতি সেই বই থেকে মানুষের চামড়া অপসারিত করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। 

জানা গেছে, ২০১৪ সালে লাইব্রেরি কর্তৃপক্ষ প্রথম জানতে পারে বইটি মানুষের চামড়া দিয়ে বাঁধানো। এরপর কেটে যায় দীর্ঘ ১০ বছর। বইটি ততদিন পর্যন্ত ওই লাইব্রেরিতেই সংরক্ষিত ছিল।  

বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) ‘ডেস্টিনিজ অফ দ্য সোল’ নামের বইটি থেকে মানুষের চামড়ায় তৈরি মলাট অপসারণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। 

হার্ভার্ড জানায়, চামড়াটি অপসারণ করা হয়েছে এবং ফ্রান্সের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে তার শেষকৃত্যের ব্যবস্থা করা হবে।

জানা গেছে, ১৮৮০ সালে লেখা হয় এই বইটি। ‘দেস দেসতিনেস দে লামে’ শিরোনামে আত্মা ও মৃত্যুপরবর্তী জীবন নিয়ে লেখা এই বইটির লেখক আর্সেন হোসায়ের। পরে বইটি নিজের চিকিৎসক বন্ধু ডা. লুডোভিচ বোল্যান্ডকে দেন লেখক। বইপ্রেমী ওই চিকিৎসক পরবর্তীকালে এক অপরিচিত মানসিক বিকারগ্রস্ত নারীর চামড়া দিয়ে বাঁধাই করেন বইটি। মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণে মৃত্যু হয়েছিল ওই নারীর।

১৯৩৪ সাল থেকে বইটি স্থান পায় হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের হাফটন লাইব্রেরিতে। এক পর্যায়ে বইটির মলাট নিয়ে সন্দেহ দেখা দেয়। এ নিয়ে ব্যাপক অনুসন্ধান চালান বিজ্ঞানী ও পর্যবেক্ষকরা। অবশেষে ২০১৪ সালে এসে গবেষকরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, বইটির মলাটে মানুষের চামড়া ব্যবহার করা হয়েছে।

তারপর থেকে এক দশক বইটি মানব চামড়ার মলাটেই সংরক্ষিত ছিল ওই লাইব্রেরিতে। দুদিন আগে সেই মলাট সরিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয় হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষ। অনেক বিবেচনা ও অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনার পর এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি।

অজ্ঞাত ওই নারীর এই দেহাবশেষের সম্মানজনক সৎকারের পাশাপাশি এখন ওই নারীর জীবন নিয়েও গবেষণা চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে হাফটন লাইব্রেরি।

কেন মানুষের চামড়া দিয়ে বই বাঁধাইয়ের মতো ‘উদ্ভট’ কাজটি করেছিলেন - সেটার ব্যাখ্যা বইয়ের ভেতর একটি চিরকুটে দিয়ে গিয়েছিলেন ডা. বোল্যান্ড। চিরকুটে তিনি লিখেছিলেন, ‘মানব আত্মা নিয়ে লেখা একটি বই অবশ্যই মানুষের চামড়া দিয়ে বাঁধাই হওয়ার দাবি রাখে।’

আজকাল মানুষের চামড়া দিয়ে বইয়ের মলাট করাকে উদ্ভট বা ঘৃণ্য কাজ হিসেবে গণ্য করা হলেও একসময় অবশ্য এর প্রচলন ছিল।

বোল্যান্ড লিখেছেন, ষোড়শ শতাব্দী থেকে ‘এনথ্রোপোডার্মিক’ শব্দটি বেশ প্রচলিত, যার অর্থ হচ্ছে মানুষের চামড়া দিয়ে বইয়ের মলাট করা। ওই শতকে এর প্রচলন ছিল। তখন কেউ অপরাধ করলে তার চামড়ায় তা লিখে দেয়া হতো। অনেক সময় কেউ কেউ মরে যাওয়ার পর তার চামড়া দিয়ে বইয়ের মলাট বানিয়ে তাকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের অনুরোধও করে যেতেন।

একই নোটে তার সংগ্রহে থাকা আরেকটি বই ‘সাভিয়েরিন পাইনাস’ও মানুষের চামড়ায় বাঁধাই করা বলে নিজের লেখা চিরকুটে উল্লেখ করে যান বোল্যান্ড। বইটি বর্তমানে লন্ডনের ‘ওয়েলকাম’ লাইব্রেরিতে আছে বলে জানা গেছে।