ছেলে আর ছেলের বউয়ের অত্যাচারে ঘরে ঠাঁই হয়নি ৭০ বছর বয়সী বৃদ্ধা মায়ের। চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের কামালদি মাথাভাঙা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
বুধবার (১৭ এপ্রিল) সরজমিনে জানা যায়, উপজেলার কামালদি মাথাভাঙা গ্রামের মৃত আলাউদ্দিন তফাদারের স্ত্রী মাকসুদা বেগম একমাত্র ছেলে সাহাব উদ্দিনের ঘরে যায়গা না হওয়ায় মেয়ের বাড়িতে মানবেতর জীবনযাপন করছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ৩৩ বছর আগে মাকসুদা বেগম তার স্বামীকে হারায়। পরে এক ছেলে ও তিন মেয়ে নিয়ে জীবন-জাপন করতে অসুবিধায় পড়ে যান। এরপর তিনি আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের সহযোগিতা নিয়ে সংসারের হাল ধরেন। একসময় ভিক্ষাও করেন এই সন্তানের দিকে তাকিয়ে। মেয়ে শিরিনা গার্মেন্টসে চাকরি নেয়। গার্মেন্টসের চাকরির টাকা দিয়ে একটি ঘর নির্মাণ করে এবং ভাই সাহাব উদ্দিনকে বিদেশে পাঠায় শিরিনা। বোনের বিয়ে হওয়ার পর সাহাব উদ্দিন আর খোঁজ খবর রাখে না। এমনকি মাকসুদা বেগমকে বাড়িতেও আসতে দেয় না। বৃদ্ধা মা মাকসুদ বেগমকে একটি ছোট রুমে যায়গা দেয় ছেলে, যা একেবারে অন্ধকার। দিনের বেলায় রাতের মতো অন্ধকার পরিবেশ থাকে। এমনকি ওই রুমের জানালাগুলো একেবারে বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে আলো বাতাস আসা যাওয়া করতে পারে না। ঘরের লাইট ও ফ্যানের সুইচও অন্য রুমে। ঠিক মতো খাবারও দেওয়া হয় না মাকসুদ বেগমকে। এনিয়ে একাধিকবার সালিশ বসলেও কাউকে তোয়াক্কা করেনা না সাহাব উদ্দিন।
শিরিনা আক্তার বলেন, বাবা মারা যাওয়ার পর ছোট ভাইকে মানুষ করার জন্য আমি গার্মেন্টসে চাকরি করি। টাকা জমিয়ে ভাইকে মালেয়শিয়া পাঠাই। সেই ভাই আজ আমাদের বাড়িতে প্রবেশ করতে দেয়না, এমনকি মাকেও। তাই মাকে আমার ঘরে ঠাই দিয়েছি।
বৃদ্ধা মাকসুদা বেগম জানান,‘আমার একমাত্র ছেলে ও ছেলের বউ আমার স্বামীর ঘর থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। তাছাড়া আমার মেয়ে শিরিনা গার্মেন্টসে চাকরি করে এই ঘর নির্মাণ করেছে এবং আমার ছেলেকে বিদেশ পাঠায়। সাহাব উদ্দিন বিয়ে করার পর থেকেই মা ও বোনদের দেখাশোনা বন্ধ দেয়। বোনদের বাড়িতে উঠতে দেয়না। অথচ তারা এখনো বাড়ির মালিক। আমাকে যেভাবে রাখছে তারচেয়ে জেলখানা ও বৃদ্ধাশ্রম অনেক ভালো। তাই মেয়ের বাড়িতেই থাকতে হয় আমার। এর আগেও বেশ কয়েকবার আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। থানায় অভিযোগ করেও তখনকার রাজনৈতিক নেতাদের ছত্র ছায়ায় আমি বিচার পাইনি।’
গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বুধবার বিষয়টি মিমাংসার জন্য ইউপি সদস্যসহ গ্রামের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ বসেছিলাম। কিন্তু সাহাব উদ্দিন গা ঢাকা দিয়েছে। সাহাব উদ্দিন যতই গা ঢাকা দিয়ে থাকুকনা কেন, আমরা অব্যশই তাকে খুঁজে বের করে এর সমাধান করবো।’