মাসুদুল মাহমুদ রূহান
তরুণ প্রযোজক মাসুদুল মাহমুদ রূহান (২৭) আত্মহত্যা করেছেন। বুধবার (৮ মে) রাতে রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজারের একটি বাসা থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। পূর্ব রায়েরবাজার হাই স্কুল সংলগ্ন একটি বাড়ির ষষ্ঠ তলার মেস করে থাকতেন রূহান।
জানা গেছে, রাত আনুমানিক ১১টার দিকে রূহানের নিজের রুম থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সিলিং ফ্যানে ঝুলছিল তার মরদেহ।
বৃহস্পতিবার সকালে মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ।
ঢাকা মেডিকেল মর্গে মৃত রুহানের খালাতো ভাই মনজুরুল হাসান অলি জানান, গত দুই থেকে আড়াই বছর আগে বিয়ে করেন রুহান। স্ত্রী নিয়ে রায়েরবাজার শেরেবাংলা রোডে থাকতেন তিনি। তবে মাসখানেক আগে তাদের বিচ্ছেদ হয়ে যায়। এরপর থেকেই হতাশাগ্রস্ত ছিলেন রোহান। বিচ্ছেদের কিছুদিন আগ থেকেই মেসে থাকা শুরু করেন। গত রাত ১টার দিকে রুহানের সহকর্মীদের মাধ্যমে তার মৃত্যুর খবর শুনতে পান তারা। রুহান আত্মহত্যা করলেও তাকে মানসিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছে কিনা সে বিষয়ে সন্দেহ পোষণ করেন তিনি।
মরদেহ উদ্ধারকারী হাজারীবাগ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শাওন কুমার বিশ্বাস গণমাধ্যমে জানিয়েছেন, চলচ্চিত্রের বিভিন্ন শুটিংয়ের কারণে দেশের বিভিন্ন জায়গায় তার আসা-যাওয়া ছিল রূহানের। যখন ঢাকায় ফিরতেন তখন ওই মেসে গিয়ে থাকতেন। তার রুমমেট বুধবার রাত ১১টার দিকে মেসে ফিরে দেখেন ফ্যানের সঙ্গে বিছানার চাদর পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে ঝুলছেন রূহান। সঙ্গে সঙ্গে তিনি আশপাশের লোকজনকে ডেকে আনেন। খবর পেয়ে রাতেই মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ধারণা করা হচ্ছে, ব্যক্তিজীবনে স্ত্রীর সাথে বিচ্ছেদের হতাশা থেকেই আত্মহত্যা করেছেন রূহান।
রূহানের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে জানা যায়, বেশি কিছুদিন ধরেই হতাশাজনক কিছু লেখা পোস্ট করেছেন তিনি। সবশেষ গত ৪ মে রাত ১টা ১৭ মিনিটে রূহান তার আইডিতে পোস্ট করেন- ‘আমার চেনা পৃথিবীর বুকে যেমন তুমি নাই, তোমার বুকেও আমি নাই! তাহলে কেন সেদিন বলেছিলে??? আমার সাথেই এই জন্ম কাটিয়ে দেবে? ভুল বুঝিও না। আমি দোষ দিচ্ছি না। যাস্ট বললাম আর কি!’
রূহানের মৃত্যুতে ফেসবুকে একটি ছোট্ট ভিডিও শেয়ার করেছেন অভিনেতা শ্যামল মাওলা। যেখানে রূহানকে দেখা যায় হাসিমুখে। ভিডিওটির ক্যাপশনে শ্যামল লিখেছেন, ‘এই হাসি আর কখনো ও হাসবে না… ওপারে দেখা হবে রূহান।’
স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম চরকির জনপ্রিয় ‘রেডরাম’ চলচ্চিত্রের প্রযোজনা করেছেন রূহান। এ ছাড়া ‘পুনর্জন্ম’, ‘চম্পা হাউজ’, ‘শুক্লপক্ষ’, ‘দ্য সাইলেন্স’, ‘আরারাত’র মতো জনপ্রিয় নাটক-সিরিজের নির্বাহী প্রযোজক তিনি। বলতে গেলে, নির্মাতা ভিকি জাহেদের অধিকাংশ কাজের প্রযোজনা করেছেন রূহান। তার মৃত্যুতে বাকরুদ্ধ সহকর্মীরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শোক প্রকাশ করছেন তারা।
মাসুদুল মাহমুদ রূহানের বাড়ি রংপুরে। পড়াশোনা করেছেন সেখানকার পুলিশ লাইন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজে। প্রযোজনার পাশাপাশি পরিচালনাতেও যুক্ত ছিলেন তিনি। বানিয়েছেন ‘উস্কানি’ নামের একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র।