ঢাকা Sunday, 19 May 2024

পঞ্চগড়ে বিএসএফের গুলিতে ২ বাংলাদেশি নিহত, ১৭ মাসে নিহত ১০

পঞ্চগড় প্রতিনিধি 

প্রকাশিত: 10:42, 8 May 2024

আপডেট: 18:18, 8 May 2024

পঞ্চগড়ে বিএসএফের গুলিতে ২ বাংলাদেশি নিহত, ১৭ মাসে নিহত ১০

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার খয়খাট পাড়া সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে দুই বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। তারা হলেন - ইয়াসিন আলী (২৩) ও আব্দুল জলিল (২৪)। তারা দুজনেই পাথর শ্রমিক। 

মঙ্গলবার (৮ মে) সকালে সীমান্ত নদী মহানন্দার তীরে তাদের মরদেহ দেখে পুলিশ ও বিজিবিকে খবর দেয় স্থানীয়রা। 

নিহত ইয়াসিন আলী জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার ব্রহ্মতোল গ্রামের কেতাব আলীর ছেলে এবং আব্দুল জলিল একই উপজেলার সদর ইউনিয়নের মাগুরা গ্রামের জুনু মিয়ার ছেলে।

বিভিন্ন তথ্যানুসারে জানা যায়, বিএসএফের গুলিতে পঞ্চগড় জেলায় এ নিয়ে গত ১৭ মাসে অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছেন। 

জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার রণচণ্ডী বিওপির আওতাধীন সীমান্ত পিলার ৪৪৬/১৪ আর-এর নিকট খয়খাট পাড়া দরগাসিং এলাকায় মঙ্গলবার এই ঘটনা ঘটে। 

জানা গেছে,  ভারতের ১৭৬/ফকিরপাড়া বিএসএফ ক্যাম্পের টহলদলের গুলিতে তারা মারা যান। নিহতদের মরদেহ বিএসএফ ভারতীয় ফাঁসি দেওয়া ক্যাম্পে নিয়ে গেছে। 
 
এদিকে এই ঘটনায় নিহত দুই যুবকের পরিবার ও এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া। নিহতদের পরিবার জানায়, তিরনই হাট ইউনিয়নের বর্তমান ইউপি সদস্য আজহারুল ইসলাম, সাবেক ইউপি সদস্য হাফিজউদ্দিনসহ চারজন সোমবার (৬ মে) সন্ধ্যা ৭টার দিকে ইয়াসিন আলী ও আব্দুল জলিলকে ডেকে নিয়ে যান। ইয়াসিন আলী এসময় রাতের খাবার খাচ্ছিলেন। 

ইয়াসিন আলীর স্ত্রী আফরোজা কলি জানান, এক মাস আগে তাদের বিয়ে হয়েছে। আমার স্বামী অপরাধ করতেই পারে। তারা আইনের মাধ্যমে বিচার করত, কিন্তু গুলি করে মারলো কেন? আমি এর বিচার চাই। 

স্থানীয়রা বলেন, মঙ্গলবার সকালে (৭ মে) রণচণ্ডী এলাকার দরগাসিং সীমান্ত এলাকার মহানন্দা নদীতে হঠাৎ ওই যুবকদের মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখেন তারা। পরে তারা বিজিবি ও পুলিশকে খবর দেন। 

জানা গেছে, নিহত দুই যুবক গরু চোরাকারবারিতে ভারির কাজ করতেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, এলাকার জনপ্রতিনিধিরাও এ কাজে জড়িয়ে পড়েছেন। 

এদিকে নিহত আব্দুল জলিলের বিয়ের কথা চলছিল বলে জানিয়েছে তাদের পরিবার।

বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত থেকে জানা গেছে, বিএসএফের গুলিতে পঞ্চগড়ে ২০২৩ ও ২০২৪ সালের এ পর্যন্ত অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছে। তারা হলেন - তেঁতুলিয়ার দক্ষিণ কাসিমগঞ্জ এলাকার আকবর আলীর ছেলে আইনুল হক, খয়খাট পাড়া এলাকার আব্দুল হামিদের ছেলে আক্কাশ আলী, দেবনগর ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের আনারুল হকের ছেলে সুজন আলী, ভজনপুর বগুলাহাগি এলাকার আব্দুর রহমানের ছেলে পলাশ হোসেন, বোদা উপজেলার সাকোয়া বকশীগঞ্জ এলাকার আব্দুর জব্বারের ছেলে নুর ইসলাম, আটোয়ারী উপজেলার ধামোর ভারিয়া পাড়া এলাকার কৃষক রবিউল ইসলাম, তেঁতুলিয়ার পাথর শ্রমিক ফরিদ ও বোদা বড়শশী এলাকার হাবিবুর রহমান ছুটু।

এদিকে বুধবার দুপুর ১টায় দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী ব্যাটালিয়ন কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠক করে। বৈঠকে বিজিবির পক্ষ থেকে এ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন ১৮ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল জুবায়েদ হাসান। আইনি প্রক্রিয়া শেষে মরদেহ হস্তান্তর করা হবে বলেও জানান তিনি। 

লেফটেন্যান্ট কর্নেল জুবায়েদ হাসান আরো জানান, আইনকে অবজ্ঞা করে বাংলাদেশিদের গুলি করে হত্যা করে কখনো দুই দেশের সম্পর্ক ভালো হতে পারে না। আমরা লিখিতভাবে এ ঘটনার তীব্র  প্রতিবাদ জানিয়েছি। এসময় বিএসএফ ১৭৬ ব্যাটালিয়নের কমান্ডার এস এস সিরোহী উপস্থিত ছিলেন।