ঢাকা Saturday, 20 April 2024

স্কটিশদের হুমকিই সত্যি হলো, নাকানি-চুবানি খেল বাংলাদেশ

ক্রীড়া ডেস্ক

প্রকাশিত: 06:36, 18 October 2021

আপডেট: 06:37, 18 October 2021

স্কটিশদের হুমকিই সত্যি হলো, নাকানি-চুবানি খেল বাংলাদেশ

রোববার স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ব্যাটিং এবং বোলিং দুই বিভাগেই বাংলাদেশকে বারবার এমন আক্ষেপ করতে দেখা গেছে

ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে স্কটল্যান্ড বলেছিল, বাংলাদেশকে নিয়ে তারা অতটা ভীত নয়। গ্রুপে ওমান-পাপুয়া নিউগিনি যা, বাংলাদেশও তাদের কাছে তা-ই। কারণ হিসেবে বলেছিল, এটা ক্রিকেটের সবচেয়ে শর্ট ভার্সনের খেলা, টি-টোয়েন্টি। সুতরাং এখানে সবই সম্ভব। স্কটল্যান্ড করেছেও তা, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে গ্রুপে নিজেদের ও বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচে রোববার (১৭ অক্টোবর) হারিয়েছে টাইগারদের। খুব বড় ব্যবধানে অবশ্য নয়, ৬ রানে। কিন্তু হার তো হারই। 

এদিকে দেশ থেকে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে খেলার আশার বাণী শুনিয়ে ওমানে যাওয়া মাহমুদউল্লাহদের পারফরম্যান্সে আশা জাগানিয়া কোনো লক্ষণ চোখে পড়েনি কাল। বোলিং এবং ব্যাটিং দেখে মনে হয়েছে স্কটল্যান্ডের থেকে পিছিয়ে আছে সদ্য ক্রিকেটের রথী-মহারথীদের বধ করা বাংলাদেশ। 

এর আগে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে একবারই স্কটল্যান্ডের মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ। ২০১২ সালে নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগে অনুষ্ঠিত ওই ম্যাচে বাংলাদেশকে স্কটিশরা হারিয়েছিল ৩৪ রানে। সেই ধারাবাহিকতা রোববারের ম্যাচেও বজায় রেখেছে স্কটিশরা। স্কটল্যান্ডের করা ১৪০ রানের জবাবে বাংলাদেশ ৭ উইকেট করেছে ১৩৪ রান। 

শুরুতেই দুই ওপেনারের ব্যর্থতা বাংলাদেশের বিপর্যয়কর পরিস্থিতির সূচনা করে। এরপর সাকিব আর মুশফিকের মাত্রাতিরিক্ত স্লো ব্যাটিংই মূলত বাংলাদেশকে ডুবিয়েছে। তারা দুজন চেষ্টা করেছেন উইকেট না হারিয়ে ধরে খেলার। কিন্তু তা করতে গিয়ে প্রচুর বল নষ্ট করেছেন। 

অফ ফর্ম থেকে বেরই হতে পারছেন না সৌম্য সরকার। একেকবার একেক পজিশনে খেলেও ভাগ্যবদল হচ্ছে না তার। এবার ইনিংস উদ্বোধন করতে নেমে শুরুতেই সাজঘরের পথ ধরেছেন সৌম্য। ফলে দ্বিতীয় ওভারেই ধাক্কা খেয়েছে টাইগাররা। জশ ড্যাভেকে মিডউইকেটে তুলে মারতে গিয়ে ক্যাচ হয়েছেন বাঁহাতি এই ব্যাটার, ৫ বলে করেছেন ৫ রান।

এরপর লিটন দাসও হতাশ করেছেন। তারও সংগ্রহ মাত্র ৫ রান (৭ বলে)। ব্র্যাড হোয়েল স্লোয়ার বুঝতে না পেরে মিডঅফে ক্যাচ লিটন।

১৮ রানেই সাজঘরে দুই ওপেনার। শুরুতেই চাপে বাংলাদেশ। সেখান থেকে অভিজ্ঞ যুগল সাকিব আল হাসান আর মুশফিকুর রহীমের ব্যাটে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় ছিল টাইগাররা। দুজনের ব্যাটে ৪৭ রানের জুটি গড়ে ওঠে। সাকিব-মুশফিক কিছুটা ধীর গতির ব্যাটিং করে বাংলাদেশকে বিপর্যয়মুক্ত করার চেষ্টা করলেও যেই না উইকেটে সেট হবেন, অমনি আউট হয়ে যান সাকিব আল হাসান। লেগ স্পিনার ক্রিস গ্রিভসের বলে ম্যাকলয়েডের হাতে ক্যাচ দেন সাকিব। ২৮ বল খেলে মাত্র ২০ রান করেন তিনি।

দুই ওপেনার এবং সাকিব আল হাসান যখন সাজঘরে ফিরে যান, তখন উইকেটে আশার প্রদীপ হয়ে জ্বলছিলেন মুশফিকুর রহিম। কিন্তু সেটাও বেশিক্ষণ টেকেনি। ৩৬ বলে ৩৮ রান করে ফিরে যান মিস্টার ডিপেন্ডেবল।

দীর্ঘদিন রানের দেখা পাচ্ছিলেন না মুশফিক। আজ স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে যখন তার ব্যাট কথা বলছিল, তখন মনে হচ্ছিল বুঝি আজ মুশফিকেরই দিন। কিন্তু না, চিরাচরিত ভুলটাই করলেন তিনি। লেগ ব্রেক বলটি গুগলি করেছিলেন ক্রিস গ্রিভস। সেটিকে স্কুপ করতে গিয়ে ব্যর্থ হলেন মুশফিক, ফলাফল বোল্ড। 

মারকুটে ব্যাটসম্যান হিসেবেই পরিচিতি আছে আফিফ হোসেন ধ্রুবর। মাঠে নেমে দুটি বাউন্ডারি মেরে সে পরিচয় খানিকটা দেয়ার চেষ্টাও করেছিলেন। কিন্তু আফিফ হোসেন ধ্রুব দলকে টেনে তোলার চেয়ে মহাবিপদে ফেলে রেখেই আউট হয়ে যান মাত্র ১২ রান করে।

এরপর প্রস্তুতি ম্যাচে ৭ ছক্কা মেরে তোলপাড় তুলে দেয়া নুরুল হাসান সোহানও যোগ দিলেন কেবল আসা-যাওয়ার মিছিলে। তিন বল নষ্ট করে দিয়ে গেলেন, কোনো রান না করেই।

একটি ছক্কা মেরে আশার আলো খানিকটা জ্বেলেছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। কিন্তু শেষ মুহূর্তে যখন দলের খুব প্রয়োজন, তখনই আউট হয়ে যান ব্র্যাড হুইলের বলে ম্যাকলয়েডের হাতে ক্যাচ দিয়ে। শেষ মুহূর্তে মেহেদী হাসান ৫ বলে ১৩ এবং সাইফউদ্দিন ২ বলে ৫ রান নিয়ে চেষ্টা করেন জয় তুলে নেয়ার। কিন্তু সেটা আর সম্ভব হয়নি।

ব্র্যাড হুইল, জস ডেভি, লেগ স্পিনার ক্রিস গ্রিভস এবং মার্ক ওয়াটের বলেই মূলত নাকানি-চুবানি খেল বাংলাদেশ। এই পরাজয়ের ফলে সুপার টোয়েলভে খেলার স্বপ্নে বড় একটি ধাক্কা খেল টাইগাররা।