
এশিয়া কাপের ফাইনাল ম্যাচ - স্বভাবতই জমজমাট লড়াইয়ের আশায় থাকেন ক্রিকেটের দর্শক-শ্রোতা, ভক্ত-অনুরাগীসহ ম্যাচটির সম্প্রচার স্বত্ব পাওয়া ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান। কিন্তু সবাইকে হতাশায় ফেলে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কাকে বিধ্বস্ত করে এশিয়া কাপ ২০২৩ ঘরে তুলেছে ভারত। অবশ্য টিম ইন্ডিয়ার সাপোর্টাররা নিঃসন্দেহে ব্যাপক আনন্দ পেয়েছেন এই ম্যাচ থেকে।
রোববার (১৭ সেপ্টেম্বর) শ্রীলঙ্কার কলম্বোতে প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ফাইনাল ম্যাচে লঙ্কানদের ১০ উইকেটে হারিয়েছেন রোহিত শর্মারা।
এদিন টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করে শ্রীলঙ্কা মাত্র ৯২ বল খেলেই গুটিয়ে যায়। সব উইকেট হারিয়ে তারা সংগ্রহ করে মাত্র ৫০ রান।
চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য ভারতের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ৫১ রান। মাত্র ৬ দশমিক ১ ওভার খেলেই সেই লক্ষ্যে পৌঁছে যায় ভারত। এ নিয়ে অষ্টমবারের মতো এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন হলো টিম ইন্ডিয়া।
এদিন ভারতের তুরুপের তাস ছিলেন মোহাম্মদ সিরাজ। তার বিধ্বংসী বোলিংয়ের কাছে শ্রীলঙ্কার ব্যাটিং লাইনআপ যেন অসহায় আত্মসমর্পণ করে। মাত্র ২১ রান খরচ করে ৬ উইকেট তুলে নেন তিনি। এছাড়া হার্দিক পান্ডিয়া তিনটি ও জসপ্রিত বুমরাহ নেন একটি উইকেট। লঙ্কানদের পক্ষে সর্বোচ্চ ১৭ রান আসে কুশল মেন্ডিসের ব্যাট থেকে।
রোববার বৃষ্টির কারণে নির্ধারিত সময়ের ৪০ মিনিট পর শুরু হয় খেলা। ব্যাটিংয়ে নেমে শ্রীলঙ্কা প্রথম ধাক্কাটা খায় ইনিংসের প্রথম ওভারেই। জসপ্রিত বুমরাহর বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ওপেনার কুশল পেরেরা (০ রান)।
এরপরই সিরাজের দাপুটে বোলিংয়ের বাহার দেখে বিশ্ব। কোনো রান ছাড়াই নিজের প্রথম ওভার শেষ করেন এই পেসার। দ্বিতীয় ওভারে একাই শিকার করেন চার উইকেট। তার প্রথম বলে লেংথ ডেলিভারিতে ব্যাট চালিয়ে পয়েন্টে রবীন্দ্র জাদেজার হাতে ক্যাচ দেন পাথুম নিসাঙ্কা (২)। পরের বল ডট দিলেও তৃতীয় বলে নতুন আসা ব্যাটার সাদিরা সামারাবিক্রমাকে (০) এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন সিরাজ। চতুর্থ বলে আসালাঙ্কাকে (০) ফিরিয়ে জাগিয়ে তোলেন হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা। যদিও হ্যাটট্রিকের পরিবর্তে সেই বলে চার হজম করতে হয়েছে ডানহাতি এই পেসারকে। কিন্তু শেষ বলে তুলে নেন আরো এক উইকেট। দুর্দান্ত এক আউটসুইঙ্গারে খোঁচা মেরে উইকেটরক্ষক লোকেশ রাহুলকে ক্যাচ দেন ধনঞ্জয়া (৪)।
এর মধ্য দিয়ে বল বাই বল ডাটা অনুযায়ী প্রথম ভারতীয় বোলার হিসেবে এক ওভারে চার উইকেট নেয়ার কীর্তি গড়লেন সিরাজ। এর পরের ওভারে লঙ্কান অধিনায়ক দাসুন শানাকাকে বোল্ড করে ক্যারিয়ারের প্রথম ফাইফার পূর্ণ করেন ডানহাতি এই পেসার। যার ফলে মাত্র ১২ রানেই ৬ উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা।
এরপর খুব বেশি দূর আর নিজেদের ইনিংস টেনে নিতে পারেনি তারা। কিছুক্ষণ থিতু হলেও সিরাজের ষষ্ঠ শিকারে পরিণত হন কুশল মেন্ডিস। ১৫তম ওভারের প্রথম দুই বলে দুই উইকেট নিয়ে লঙ্কানদের কফিনে শেষ পেরেকটি ঠুকেন পান্ডিয়া।
লঙ্কানদের ১১ জন ব্যাটারের মধ্যে পাঁচজনকেই ফিরতে হয় শূন্য রানে আউট হয়ে। মেন্ডিসের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অপরাজিত ১৩ রান করেন দুশান হেমন্ত। এছাড়া আর কোনো ব্যাটারই দুই অঙ্ক ছুঁতে পারেননি। এশিয়া কাপে এটাই কোনো দলের সর্বনিম্ন স্কোর। এর আগে লজ্জার রেকর্ডটি ছিল বাংলাদেশের। ২০০০ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৮৩ রানে অলআউট হয়েছিল টাইগাররা।
জবাব দিতে নেমে উড়ন্ত সূচনা করেন ভারতের দুই ওপেনার শুভমান গিল ও ইশান কিশান। মাত্র ৩৭ বলেই তারা ছুঁয়ে ফেলেন ৫১ রানের লক্ষ্য। গিল ১৯ বলে ২৭ ও কিশান ১৮ বলে ২৩ রানে অপরাজিত ছিলেন।
ম্যান অফ দ্য ম্যাচ হয়েছেন মোহাম্মদ সিরাজ।