ঢাকা Thursday, 25 April 2024

বাড়ছে পুকুর কমছে চাষের জমি

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

প্রকাশিত: 19:31, 30 August 2021

বাড়ছে পুকুর কমছে চাষের জমি

ফসলি জমিতে চলছে পুকুর খনন। ছবি : প্রতিবেদক

দেশের ‘উত্তরের শস্যভাণ্ডার’ হিসেবে খ্যাত জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে সার, কীটনাশক ও কৃষি উপকরণের দাম বৃদ্ধিসহ নানা কারণে ফসলি জমিতে পুকুর খনন করে মাছ চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা। তারা বলছেন, ধান চাষ করে আশানুরূপ লাভ হচ্ছে না। অন্যদিকে মাছ চাষে খরচ কম, লাভ বেশি। এজন্যই তারা মাছ চাষে ঝুঁকছেন। 

এদিকে অবাধে ফসলি জমিতে পুকুর খননের ফলে কৃষিজমি কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছে জেলা কৃষি বিভাগ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার পাঁচ উপজেলায়ই ফসলি জমিতে পুকুর খনন বেড়েছে। এমন পুকুর বেশি দেখা গেছে সদর উপজেলার ভেলাজান, চিলারং ও জগন্নাথপুর এলাকায়। 
উপজেলাগুলোর মধ্যে বালিয়াডাঙ্গী এলাকার কালমেঘ, হরিণমারি, পীরগঞ্জ, রাণীশংকৈলসহ সীমান্তঘেঁষা এলাকাগুলোতেও পুকুর খনন চলছে। এ বিষয়ে জমির মালিকদের ভাষ্য, ধানের চেয়ে পুকুরে মাছ চাষে বেশি লাভ হওয়ায় তারা পুকুর খননের দিকে ঝুঁকছেন।

সদর উপজেলার গাঙ্গর এলাকার কৃষক আব্দুল আওয়াল। দীর্ঘ ২০ বছর ধরে তিনি ফসলি জমিতে ধান ও সবজি উৎপাদন করে আসছিলেন। তার পাঁচ একর জমি রয়েছে। কিন্তু এবার ওই জমিতে পুকুর খনন করে মাছ চাষ শুরু করেছেন। তিনি জানান, ফসল উৎপাদনে শ্রম ও কাঙ্ক্ষিত লাভ না হওয়ায় ঝামেলাবিহীন অর্থ উপার্জনের জন্য তিনি এবার পুকুর খনন করে মাছচাষ শুরু করেছেন।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ভেলাজান এলাকার মৎস্যচাষী আব্দুল গফুর বলেন, যেসব জমিতে আগে রবিশস্য আবাদ করতাম, সে জমিতে এখন মাছ চাষ করছি। তিনি আরো বলেন, অল্প জায়গাতে ধানের লাভ হয় কম। আবার ধান উৎপাদন, মাড়াই খরচসহ শ্রমিকদের টাকা দিতে গিয়ে নিজের আর কিছু থাকে না। 

ওই এলাকার মৎস্যচাষী আব্দুল হাই, মানিক, জলিলসহ একাধিক কৃষক অভিযোগ করেন, উৎপাদিত ধান বাজারে বিক্রি করতে গেলে ভালো দাম পাওয়া যায় না। তাই বাধ্য হয়েই তারা মাছ চাষে ঝুঁকেছেন।

এবার সাত একর জমিতে পুকুর খনন করে মাছ চাষ করছেন মানিক মিয়া। তার মতে, মাছ চাষে সামান্য খরচ হলেও লাভ হয় ধানের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি। এবার খরচ বাদ দিয়ে ছয় লাখ টাকা লাভ আশা করছেন এই চাষি। 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর কার্যালয় সূত্র বলছে, ২০০৭ সালে জেলায় ফসলি জমির পরিমাণ ছিল এক লাখ ৫৫ হাজার ১১১ হেক্টর। বর্তমানে তা কমে দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৫১ হাজার ৭০৩ হেক্টরে। গত ১০ বছরে ঠাকুরগাঁওয়ে মাছ চাষে পুকুর খনন হয়েছে পাঁচ হাজার হেক্টর ফসলি জমিতে। তবে যে কেউ চাইলে ফসলি জমিতে পুকুর খনন করতে পারেন না বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো.আবু হোসেন।

তিনি বলেন, কেউ যদি ফসলি জমিতে পুকুর খনন করতে চান তাহলে অবশ্যই কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর থেকে অনুমতি নিতে হবে। ফসলি জমিতে যেসব পুকুর খনন করা হয়েছে সে সম্পর্কে তার জানা নেই বলে তিনি উল্লেখ করেন।  

ঠাকুরগাঁও জেলা মৎস্য কর্মকর্তা খালিদুজ্জামান বলেন, জেলায় প্রতিবছর পাঁচ শতাংশ হারে পুকুরের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এবার সরকারিভাবে হরিপুর ও পীরগঞ্জে ১২টি পুকুর খনন করা হয়েছে। 

এদিকে আবাদি জমি নষ্ট করে পুকুর খনন খাদ্য উৎপাদন ও পরিবেশের জন্য হুমকি বলে মনে করছেন ঠাকুরগাঁও পরিবেশবাদী সংগঠন সৃজনের সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মামুন। তিনি বলেন, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করতে হলে অবিলম্বে যত্রতত্র পুকুর খনন বন্ধ করতে হবে।