ঢাকা Friday, 19 April 2024

বাড়ির ছাদে ছাগল পালন করে স্বাবলম্বী রোজিনা

গাইবান্ধা প্রতিনিধি

প্রকাশিত: 22:15, 1 August 2021

বাড়ির ছাদে ছাগল পালন করে স্বাবলম্বী রোজিনা

সাধারণত মানুষ বাড়ির ছাদে ছাদকৃষি করে। ছাদে ছাগল পালন খুব একটা চোখে পড়ে না। কিন্তু সেই ব্যতিক্রম কাজটিই করেছেন গাইবান্ধার রোজিনা বেগম (৩০), ছাদে করেছেন ছাগলের খামার। তিনি আজ সফল খামারি ও স্বাবলম্বী নারী। 

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ পৌরসভার দুর্গাপুর এলাকায় রোজিনা বেগমের বাড়ি। একটি দিয়ে শুরু করে এখন তিনি ৩৯টি ছাগলের মালিক। ছাগল লালনপালনের সব কাজ ছাদেই করেন। পাশাপাশি একই বাড়িতে হাঁস-মুরগি, কবুতর এবং গরুও পালন করেন তিনি। 

সরেজমিন দেখা যায়, সাত শতক বসতভিটায় রোজিনার একতলা পাকা বাড়ি। বাড়ির ছাদে ছাগলের খামার। একটি কক্ষে হাঁস-মুরগি, একটি কক্ষে কবুতর। আরেকটি কক্ষে গরু-বাছুর। দুটি কক্ষে তারা থাকেন। জনবসতিপূর্ণ এলাকায় অবস্থিত বাড়িটি যেন পশুপাখিদের অভয়ারণ্য। তার খামারে দুই নারীর কর্মসংস্থান হয়েছে। 

খামারটির ছবি তোলার সময় দুর্গাপুর এলাকার বাসিন্দা ফজেল হোসেন বলেন, আমরা পুরুষ মানুষ হয়ে যা পারিনি, রোজিনা আপা সেটা করেছেন। পশুপাখি বিক্রির সময় তাকে আমরা সহায়তা করি।  
পারিবারিক সূত্র জানায়, রোজিনার স্বামী সাইফুল ইসলাম মালয়েশিয়া প্রবাসী। দীর্ঘ বারো বছর ধরে তিনি সেখানে থাকেন। একমাত্র মেয়ে শিখা খাতুন দশম শ্রেণিতে পড়ছে। দুর্গাপুরের বাড়িতে মা ও মেয়ের সংসার। মেয়ে বিদ্যালয়ে গেলে মা একা হয়ে পড়তেন। অবসর সময় কাটে না। 

২০১৬ সালের  মাঝামাঝি শিখা উপবৃত্তি পায় ১ হাজার ৩০০ টাকা। সেই টাকা দিয়ে একটি ছাগল কেনেন রোজিনা। প্রথমবারই ছাগলটি তিনটি বাচ্চা দেয়। এভাবেই গত পাঁচ বছরে তার খামারে ছাগলের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৭টি। মাঝে মাঝে ছাগল বিক্রি করে শিখার লেখাপড়াসহ অন্যান্য খরচ চালান। বর্তমানে তার খামারে ৩৯টি ছাগল রয়েছে। 

এদিকে ছাগল পালন লাভজনক হওয়ায় রোজিনা একই বাড়িতে হাঁস-মুরগি, কবুতর এবং গরুও পালন শুরু করেছেন। বর্তমানে তার বাড়িতে ১৫০টি কবুতর, দুটি গরু, ৫৫টি হাঁস-মুরগি রয়েছে। এসব থেকেও তার আয় হয়। খামারের আয় দিয়ে তার সংসার চলে। প্রবাসী স্বামীর আয় মেয়ের বিয়ে এবং ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করছেন। 

ছাগল পালনে সাফল্যের জন্য উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ থেকে  রোজিনা বেগম সেরা ছাগল খামারি হিসেবে পুরস্কারও পেয়েছেন। 

রোজিনা বেগম বলেন, বাড়ির ছাদে কাপড় শুকানো ছাড়া কোনো কাজ হতো না। সেই ছাদে জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের পরামর্শে তিনি ছাগল পালন করছেন। দিনে খোলা ছাদে ছাগল ঘুরে বেড়ায়। রাতে ছাদের একপাশে টিনের চালার নিচে ছাগল রাখা হয়। খাবার ও পরিচর্যা ছাদেই চলে। তিনি বলেন, আগে সময় কাটানোর জন্য ছাগল পালন করতাম। এখন এই ব্যবসা লাভজনক হয়েছে। বুদ্ধি খাটিয়ে যে কেউ পরিশ্রম করলে সাফল্য আসবেই। 

তিনি আরও বলেন, ভবিষ্যতে তিনি ১০০টি ছাগলের খামার করবেন। 

রোজিনার মেয়ে শিখা খাতুন বলেন, মাকে নিয়ে আমরা গর্ববোধ করি। লেখাপড়ার কাজে তাকে সহায়তা করছি। 

তিনি আরো বলেন, বাবা বিদেশের মাটিতে কষ্ট করে উপার্জন করেন। তার কাছ থেকে টাকা নিয়ে পড়াশোনার খরচ চালাতে হয় না। আমার সব খরচের টাকা মা-ই বহন করেন।

এসব বিষয়ে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. মাছুদার রহমান সরকার বলেন, রোজিনা বেগমকে ছাগল পালনের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। বিনামূল্যে তার খামারের পশুপাখিদের চিকিৎসা সহায়তা দেয়া হচ্ছে। 

তিনি আরো বলেন, রোজিনার মতো ছাদে ছাগল পালনের জন্য শহরের খামারিদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।