ঢাকা Friday, 19 April 2024

ভিসা নিয়ে মাথা ব্যথা করে লাভ নেই : প্রধানমন্ত্রী

স্টার সংবাদ

প্রকাশিত: 18:18, 3 June 2023

আপডেট: 22:00, 3 June 2023

ভিসা নিয়ে মাথা ব্যথা করে লাভ নেই : প্রধানমন্ত্রী

আমেরিকার নতুন ভিসানীতি নিয়ে মাথা ব্যথা করার কোনো কারণ নেই বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, পৃথিবীতে বন্ধুত্ব করার আরো অনেক মহাদেশ আছে। তাই আমেরিকা না গেলে কিচ্ছু যায়-আসে না। 

শনিবার (৩ জুন) বিকেলে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের নবনির্মিত কার্যালয় উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এমন অভিমত ব্যক্ত করেন সরকারপ্রধান।  

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কে আমাদের ভিসা দেবে না, কে স্যাংশন দেবে - সেসব নিয়ে মাথা ব্যথা করে লাভ নেই। ২০ ঘণ্টা জার্নি করে, আটলান্টিক পার হয়ে আমেরিকা না গেলে কিচ্ছু যায়-আসে না। 

তিনি বলেন, পৃথিবীতে আরও অনেক মহাসাগর আছে, অনেক মহাদেশ আছে, সেই মহাদেশের সঙ্গে মহাসাগরেই আমরা যাতায়াত করব, বন্ধুত্ব করব। আমাদের অর্থনীতি আরো মজবুত হবে, উন্নত হবে, আরো চাঙা হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, ভোট যারা চুরি করে, ভোট নিয়ে যারা চিরদিন খেলেছে, জনগণের ভাগ্য নিয়ে যারা খেলেছে, আমি তাদের (আমেরিকা) বলব - ওই সন্ত্রাসী দলের দিকে নজর দেন।

তিনি বলেন, সন্ত্রাসী এবং দুর্নীতির দায়ে এই আমেরিকাই কিন্তু তারেক জিয়ার ভিসা দেয় নাই। এখন তারা (বিএনপি) আবার তাদের কাছে ধরনা দেয়।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা নিজের পায়ে চলব, নিজের দেশকে গড়ে তুলব। কারো মুখাপেক্ষী হয়ে না। 

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, জনগণের প্রতি আমার আস্থা আছে, বিশ্বাস আছে। তারা জানে একমাত্র নৌকায় ভোট দিলেই তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়। 

তিনি বলেন, নৌকায় ভোট দিয়ে (জনগণ) স্বাধীনতা পেয়েছে, নৌকায় ভোট দিয়েই উন্নত জীবন পেয়েছে, নৌকায় ভোট দিয়েই ডিজিটাল বাংলাদেশ পেয়েছে। নৌকায় ভোট দিয়েছে বলেই আজকে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, মসজিদ সব কিছুর উন্নতি হচ্ছে। আওয়ামী লীগ থাকলে সবার সেবা করে, সবার কাজ করে।

আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের এটিই বলব, জনগণের স্বার্থে, জনগণের কল্যাণে ত্যাগ স্বীকার করলে জনগণ কিন্তু সেটার মর্যাদা দেয়। এই কথাটাই মনে রাখতে হবে।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ত্যাগ করতে এসেছে। ভোগে বিশ্বাস করে না। সেই কথা মাথায় রেখে, জনগণের সেবক হিসেবে আমি কাজ করে যাচ্ছি। জাতির পিতা কাজ করে গেছেন।

দলকে আরো শক্তিশালী করার নির্দেশনা দিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে। এ সমস্ত অশুভ শক্তি বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে যেন আর ছিনিমিনি খেলতে না পারে সেভাবে এদের করালগ্রাস থেকে দেশের মানুষকে রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব।

প্রস্তাবিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন,  (বাজেট সম্পর্কে) কে কি বলছে তা নিয়ে আমাদের মাথা ঘামানোর দরকার নেই। আমরা একটি উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত করার জন্য আমরা একটি উপযুক্ত বাজেট ঘোষণা করেছি। 

তিনি বলেন, দেশের মানুষ আমাদের পক্ষে আছে। তাই আমরা বাজেট বাস্তবায়ন করতে পারব, ইনশাআল্লাহ।

প্রায় ৭.৬২ লাখ কোটি টাকার এত বিশাল বাজেটের বাস্তবায়নে যারা শঙ্কিত, তাদের কড়া সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, প্রতিবছর বাজেট পাশের আগে কেউ কেউ বলেন, আমরা বাজেট বাস্তবায়ন করতে পারব না। কিন্তু আমরা প্রতিটি মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি।

এসময় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন অনুযায়ী ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে ক্ষুধা  ও দারিদ্র্যমুক্ত একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, আজকে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বিশ্বে উজ্জ্বল হয়েছে। বাংলাদেশ আজকে যে গণতান্ত্রিক ধারা অর্জন করতে পেরেছে সেখানে আওয়ামী লীগসহ আমাদের সমমনা দলগুলোকে নিয়ে আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়েই আমরা গণতন্ত্র অর্জন করতে পেরেছি। যার ফলে আজকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী জানান, লোডশেডিংয়ে জনগণের ভোগান্তি লাঘবের জন্য তার সরকার ইতোমধ্যে কাতার ও ওমানের সঙ্গে বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী জ্বালানি ক্রয়ে চুক্তি করেছে এবং অন্য কয়েকটি দেশের সঙ্গেও একই ধরনের চুক্তির লক্ষ্যে কাজ করছে।

তিনি বলেন, এটা আমাদের জন্য ভালো যে আমরা কাতার ও ওমানের সঙ্গে চুক্তি করেছি। আমরা অন্যান্য কিছু দেশের সঙ্গে এ নিয়ে কাজ করছি, যাতে আমরা গ্যাস ক্রয় করে দেশে আনতে পারি এবং জনগণের দুর্ভোগ লাঘব করতে পারি। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার সবার দোরগোড়ায় বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছেন। কিন্তু মূল্যবৃদ্ধির কারণে তেল, গ্যাস ও কয়লার ঘাটতি থাকায় জনগণকে লোডশেডিংয়ের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এসব আমাদের আমদানি করতে হয়।

তিনি বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য জ্বালানি আমদানি করতে তাদের সমস্যায় পড়তে হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিরুদ্ধে ছিল, তারা এখন সেগুলো স্থাপন করায় কয়লার সংকট দেখা দিয়েছে।

তিনি বলেন, কোভিড-১৯ মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার কারণে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা এবং মূল্যস্ফীতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, কোভিড-১৯ মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, অর্থনৈতিক মন্দা এবং বিশ্বব্যাপী মূল্যবৃদ্ধি না ঘটলে জনগণকে কখনোই জ্বালানির জন্য ভোগান্তি পোহাতে হতো না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি জানতেন যে জনগণের জন্য লোডশেডিং সহ্য করা কঠিন হবে। তাই তার সরকার সফলভাবে এর সমাপ্তি টেনেছিল। কিন্তু বৈশ্বিক পরিস্থিতি এটি ঘটতে বাধ্য করেছে।

এসময় তিনি দেশবাসীকে স্মরণ করিয়ে দেন যে, খালেদা জিয়ার সরকার কানসাটে বিদ্যুতের দাবিতে আন্দোলনকারী ১৮ কৃষককে এবং রমজান মাসে উপযুক্ত মজুরির দাবিতে আন্দোলনকারী ১৭ জন শ্রমিককে হত্যা করেছিল।

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের ওপর বারবার আঘাত, হামলা হয়েছে। আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা করা হয়েছে। ইয়াহিয়া খান চেষ্টা করেছে, জিয়াউর রহমান চেষ্টা করেছে, এরশাদ-খালেদা জিয়াও চেষ্টা করেছে আওয়ামী লীগকে কীভাবে ধ্বংস করা যায়? আওয়ামী লীগ এদেশের মানুষের সংগঠন হিসেবে গড়ে উঠেছে। তাই এই সংগঠনকে কেউ ধ্বংস করতে পারেনি, পারবেও না।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ শুধু একটি দল নয়, আওয়ামী লীগ ইনস্টিটিউটের মতো। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে এদেশের উন্নতি হয়, এটাই বাস্তব। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নিয়েই বঙ্গবন্ধু যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলে স্বল্প সময়ের মধ্যে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তোলেন। আওয়ামী লীগ নামক সংগঠন এদেশের মানুষের জন্য আন্দোলন-সংগ্রামে সবসময় ভূমিকা পালন করেছে।

সরকারপ্রধান বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দেশের কল্যাণ হয়। মানুষের কল্যাণে সেটা আমরা প্রমাণ করেছি। আমরা যেসব কাজ করি, আওয়ামী লীগ যেসব পরিকল্পনা নেয়, প্রকল্প নেয়, তা সুপরিকল্পিতভাবেই করা হয়। আমাদের মাটি, মানুষ, পরিবেশ, আমাদের দেশের ভৌগোলিক অবস্থান, প্রাকৃতিক অবস্থা, সবকিছু বিবেচনা করেই আমরা প্রকল্প গ্রহণ করি। তার ফলে আমাদের প্রতিটি প্রকল্পই সাফল্য অর্জন করে। মানুষ তার সুফল পায়।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ড. মো. এনামুর রহমান অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।

ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বেনজীর আহমেদের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক পনিরুজ্জামান তরুণের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী এমপি, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলামসহ কেন্দ্রীয় ও শাখা নেতারা উপস্থিত ছিলেন।