ঢাকা Friday, 26 April 2024

বাজেট নিয়ে সিপিডির বক্তব্যের কড়া সমালোচনা তথ্যমন্ত্রীর

স্টার সংবাদ

প্রকাশিত: 19:13, 2 June 2023

বাজেট নিয়ে সিপিডির বক্তব্যের কড়া সমালোচনা তথ্যমন্ত্রীর

প্রস্তাবিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট নিয়ে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করেছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। 

তিনি বলেছেন, গত ১৪ বছরে সিপিডি বাজেটের প্রশংসা করতে পারেনি। এ বছর তো বাজেট প্রস্তাব পেশ চলমান থাকা অবস্থায়ই তারা বলেছে, এই বাজেট উচ্চাভিলাষী, বাজেট বাস্তবায়ন হবে না। অথচ বাংলাদেশের বাজেট বাস্তবায়নের গড় হার ৯৭ শতাংশ। ডলারের মূল্য না বাড়লে আমাদের মাথাপিছু আয় ৩ হাজার ডলার ছাড়িয়ে যেত। এসময় দেশের জিডিপি বেড়েছে, দারিদ্র্য ৪১ শতাংশ থেকে কমে ১৮ শতাংশে নেমে এসেছে। এগুলো তাদের চোখে পড়ে না। 

তথ্যমন্ত্রী আরো বলেন, আসলে সিপিডিকে তাদের পাণ্ডিত্য দেখাতে হয় এবং ভুল ধরাটাই তাদের পেশা। এভাবেই তারা নানা জায়গা থেকে ফান্ড পায়। এ কারণেই তারা প্রশংসা করতে পারে না।

শুক্রবার (২ জুন) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে সরকারি বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তথ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন। 

ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আগামী ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট গণমুখী ও গরিববান্ধব। তিনি বলেন, বাজেটের সমালোচকদের সমালোচনা বরাবরের মতোই গৎবাঁধা ও গতানুগতিক। অনেকে বাজেট ভালোভাবে না দেখেই তাড়াহুড়ো করে সমালোচনায় ব্যস্ত।

তিনি আরো বলেন, এটি আওয়ামী লীগ সরকারের টানা ১৫তম বাজেট এবং প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০তম। এই বাজেট ২০০৮-২০০৯ সালের তুলনায় প্রায় নয়গুণ বড় এবং পিপিপিতে (পারচেজিং পাওয়ার প্যারিটি) ২০০৯ সালের ১০০ বিলিয়ন ডলার জিডিপির তুলনায় এখনকার জিডিপি এক ট্রিলিয়ন প্লাস ডলার, অর্থাৎ প্রায় ১০ গুণ বড়, যা নিঃসন্দেহে দেশের অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির পরিচায়ক।

মন্ত্রী বলেন, বিশ্বমন্দা, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, ডলার সংকটের কারণে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে শৈথিল্য আসায় বাজেট প্রণয়ন বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। তারপরও এবারের বাজেট গত বছরের তুলনায় প্রায় ১ লাখ হাজার কোটি টাকা বেশি। 

প্রস্তাবিত বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রম প্রসঙ্গে হাছান মাহমুদ বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা খাতে মোট বাজেটের ১৬.১৮ শতাংশ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। আরো মানুষকে সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ে আনার এবং এ খাতে বিভিন্ন ভাতার পরিমাণ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।

স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটের সবচেয়ে বড় উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে, এই অর্থবছরেই প্রথম সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালু করা হচ্ছে, যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চিন্তাপ্রসূত। কোনো রাজনৈতিক দল এ ধরনের সর্বজনীন পেনশন চালুর প্রস্তাব দেয়নি।

১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সের যে কেউ ১০ বছরের জন্যে চাঁদা দিয়ে পেনশন ব্যবস্থার আওতায় আসতে পারবে উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, পঞ্চাশের বেশি বয়স হলেও ১০ বছর চাঁদা দিয়ে পেনশনের সুযোগ রয়েছে।

আয়করের বিষয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের কর ও জিডিপির অনুপাত দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বনিম্ন। গত ১৪ বছরে দেশের জিডিপি প্রায় ১০ গুণ, বাজেট প্রায় নয়গুণ বৃদ্ধি পেলেও আয়কর দেয়ার হার বেড়েছে মাত্র তিনগুণ। ২০০৯ সালে ১১ লাখ মানুষ আয়কর দিত, গত বছর ২৯ লাখ মানুষ আয়কর দিয়েছে। অথচ দেশে অন্তত ২ কোটি মানুষ আয়কর দিতে সক্ষম। কিন্তু মানুষ কর দেয় না। তাই করের আওতা বাড়ানো অযৌক্তিক নয়।

‘আইএমএফের প্রেসক্রিপশনে এ বাজেট লুটপাটের’- বিএনপির এমন সমালোচনার জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, বিএনপির অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান আইএমএফের প্রেসক্রিপশনে বাজেট দিতে প্রতিবার বাজেটের আগে প্যারিস কনসোর্টিয়ামে ছুটে যেতেন সাহায্যের জন্যে। বর্তমানে বাংলাদেশের বাজেট কোনোভাবেই বিদেশি সাহায্যনির্ভর নয়। এ বাজেটে ১ লাখ কোটি টাকার কিছু বেশি বৈদেশিক ঋণ নেয়া হবে। বিএনপি লুটপাটে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন, তারা পরপর পাঁচবার দেশকে দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন বানিয়েছিল। তাদের মুখে লুটপাটের অভিযোগ শুনলে হাসি পায়।

ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের চলতি বাজেট নিয়ে সমালোচনার বিষয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা থাকবে, ইতিবাচক সমালোচনাকে আমরা সবসময় স্বাগত জানাই।

প্রসঙ্গত, সিপিডি প্রস্তাবিত বাজেটকে বাস্তববিবর্জিত ও উচ্চাভিলাষী বলে অভিমত ব্যক্ত করেছে। শুক্রবার বাজেট-বিষয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সিপিডির  নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত পালনের আভাস স্পষ্ট। তিনি আরো বলেন, রাজস্ব-ব্যাংক খাত, মূল্যস্ফীতি, রপ্তানি, বিদ্যুৎ জ্বালানি, ডলার সংকটসহ নানা কারণে দেশের সামাগ্রিক অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে। এবারের বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি, বার্ষিক উন্নয়ন ও বেসরকারি বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রায় যে চমক দেখানো হয়েছে তা উচ্চাভিলাষী, বাস্তবসম্মত নয়।