ঢাকা Saturday, 20 April 2024

গাজীপুরে টিকটকার স্ত্রীকে হত্যা করল স্বামী, মামলা মায়ের

সারাদেশ ডেস্ক

প্রকাশিত: 22:16, 5 June 2023

গাজীপুরে টিকটকার স্ত্রীকে হত্যা করল স্বামী, মামলা মায়ের

গাজীপুরে এক টিকটকার ও বিউটিশিয়ানকে হাত-পা বেঁধে হত্যা করেছেন তার স্বামী, খালাতো ভাইসহ অন্যরা। এ ঘটনায় ওই তরুণীর মা বাদী হয়ে সোমবার (৫ জুন) থানায় মামলা করেছেন।

জানা গেছে, দাম্পত্য কলহ ও পারিবারিক বিরোধের প্রতিশোধ নিতেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। খুনিরা বোরকা পরে পার্লারে গিয়ে ওই তরুণীকে হত্যা করে। 

পুলিশ ঘটনার সঙ্গে জড়িত এক নারীসহ নিহত বিউটিশিয়ানের খালাতো ভাইকে গ্রেপ্তার করেছে। পলাতক রয়েছে তার স্বামী। 

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন - গাজীপুর সদর উপজেলার জয়দেবপুর থানাধীন খুদে বর্মী এলাকার সোমা রাণী ঘোষ (৩০) ও মহানগরীর সদর থানাধীন আদাবৈ এলাকার নিহত বিউটিশিয়ানের খালাতো ভাই রাকিবুল ইসলাম (২২)।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) সদর থানার ওসি জিয়াউল ইসলাম জানান, রোববার (৪ জুন) রাতে মহানগরীর সদর থানাধীন আদাবৈ এলাকার ‘রাজকন্যা বিউটিপার্লার’-এর একটি কক্ষ থেকে ওই পার্লারের মালিক রুবিনা আক্তারের (২৪) হাত-পা বাঁধা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় রুবিনার মা আছিয়া বেগম বাদী হয়ে পরদিন থানায় মামলা করেছেন। 

পুলিশ ঘটনার সঙ্গে জড়িত রুবিনার খালাতো ভাই রাকিবুল ইসলাম ও সোমা রাণী ঘোষকে গ্রেপ্তার করেছে। রুবিনার স্বামী ঘটনার পর থেকেই পলাতক। গ্রেপ্তার দুই আসামিকে আদালতের মাধ্যমে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুদিনের রিমান্ডে আনা হয়েছে।

ওসি আরো জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার হওয়া দুজন হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দ্রব্যাদি জব্দ করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের আগে খুনিরা ঘটনাস্থল রেকি করেছিল।

ওসি বলেন, বছরখানেক আগে হিন্দু সম্প্রদায়ের যুবক মৃদুল ঘোষকে ভালোবেসে বিয়ে করেন বিউটিশিয়ান রুবিনা আক্তার। এটি রুবিনার তৃতীয় বিয়ে। রুবিনা গাজীপুর মহানগরীর সদর থানাধীন আদাবৈ এলাকার আব্দুস ছালাম তালুকদারের মেয়ে। তার স্বামী মৃদুল ঘোষ সদর উজেলার জয়দেবপুর থানাধীন খুদে বর্মী এলাকার নিতাই ঘোষের ছেলে।

বিউটি পার্লারের ব্যবসার পাশাপাশি রুবিনা টিকটক করতেন। সম্প্রতি তিনি পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন। বিষয়টি মৃদুল জেনে গেলে তাদের মধ্যে দাম্পত্য কলহ সৃষ্টি হয়। এর জেরে মৃদুলকে বঁটি দিয়ে কুপিয়ে ও মারধর করে ঘর থেকে বের করে দেন এবং দেনমোহরের ২০ লাখ টাকা দাবি করেন রুবিনা। দেনমোহরের টাকা পরিশোধ না করলে নানাভাবে হয়রানি করারও হুমকি দেন রুবিনা। 

এসব কিছু থেকে পরিত্রাণ পেতে ও প্রতিশোধ নিতে মৃদুল বিষয়টি রুবিনার খালাতো ভাই রাকিবুলকে জানান।

এদিকে রাকিবুলদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে পারিবারিক বিরোধ চলে আসছিল রুবিনার পরিবারের। তিনি সমস্যা সমাধান করে দেয়ার আশ্বাস দিয়ে মৃদুলকে সঙ্গে নিয়ে রুবিনাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। এ কাজের জন্য রাকিবুল একজোড়া নূপুর ও তিন হাজার টাকা চান মৃদুলের কাছে। খুনের কাজে সহযোগিতার জন্য নগদ পাঁচ হাজার টাকা ও বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ পাইয়ে দেয়ার আশ্বাস দিয়ে সম্পর্কীয় ফুপাতো বোন সোমা রাণী ঘোষকে ভাড়াটিয়া খুনি হিসেবে ঠিক করেন মৃদুল। 

পরিকল্পনা অনুযায়ী মৃদুল ও সোমাকে দুটি বোরকা সরবরাহ করেন রাকিবুল। ঘটনার দিন বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে বোরকা পরে সোমা ও রুবিনার স্বামী মৃদুল একটি অটোরিকশায় চড়ে রুবিনার রাজকন্যা বিউটি পার্লারে যান। তারা পার্লারের কক্ষে ঢুকে রুবিনাকে মেঝেতে শুইয়ে হাত-পা বেঁধে ফেলেন। পরে একটি তোয়ালে দিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করেন। সে সময় বাইরে দাঁড়িয়ে পাহারা দেন রাকিবুল। হত্যার পর সেখান থেকে মৃদুল ও সোমাকে একটি মোটরসাইকেলে নিয়ে আমতলী এলাকায় পৌঁছে দেন রাকিবুল।