ঢাকা Friday, 29 March 2024

কক্সবাজারে ধর্ষিত গৃহবধূ আসামিদের পূর্বপরিচিত : পুলিশ 

সারাদেশ ডেস্ক

প্রকাশিত: 22:21, 24 December 2021

আপডেট: 22:40, 24 December 2021

কক্সবাজারে ধর্ষিত গৃহবধূ আসামিদের পূর্বপরিচিত : পুলিশ 

ছবি সংগৃহীত

কক্সবাজারে স্বামী-সন্তানসহ বেড়াতে এসে ধর্ষণের শিকার গৃহবধূ ধর্ষকদের পূর্বপরিচিত বলে জানিয়েছে পুলিশ। কক্সবাজার পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, ওই নারীর সঙ্গে ধর্ষণে অভিযুক্ত আশিকুল ইসলাম আশিকসহ কয়েক যুবকের পূর্বপরিচয় ছিল বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। তারা আরো বলেন, ওই নারী ও তার স্বামীর টানা তিন মাস কক্সবাজারে অবস্থানের তথ্যও পেয়েছে পুলিশ।  

এ প্রসঙ্গে ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. জিললুর রহমান সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ওই নারীকে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করছি। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি তিন মাস ধরে কক্সবাজারে অবস্থানের পাশাপাশি প্রধান আসামি আশিকুল ইসলামের সঙ্গে পূর্বপরিচয় থাকার কথা স্বীকার করেছেন। 

পুলিশ সুপার বলেন, আশিক তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী। ১৬ মামলার আসামি, মাদকসেবক ও মাদক ব্যবসায়ী। তার সঙ্গে বাইরের আরেকজন নারীর পরিচয় থাকা সন্দেহজনক। আমরা ঘটনার গভীরে যাওয়ার চেষ্টা করছি।

এদিকে দলবদ্ধ ওই ধর্ষণের ঘটনায় শুক্রবার (২৪ ডিসেম্বর) দুপুর পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হয়নি। ঘটনা তদন্ত করছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। অভিযোগকারী গৃহবধূ ও তার স্বামী বর্তমানে ট্যুরিস্ট পুলিশের হেফাজতে আছেন। ঘটনার বিষয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।  জিজ্ঞাসাবাদশেষে তাদের আদালতে নেয়া হতে পারে।

তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ঢাকার যাত্রাবাড়ীর জুরাইন এলাকায় থাকার কথা বললেও ওই দম্পতি তাদের সন্তানসহ তিন মাস ধরে কক্সবাজারের বিভিন্ন হোটেলে থাকছিলেন। তারা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন নাম ব্যবহার করতেন। ওই নারী পুলিশের কাছে বিষয়টি স্বীকার করেছেন বলেও দাবি কর্মকর্তাদের। 

আসামি আশিক প্রসঙ্গে পুলিশ জানায়, তার বিরুদ্ধে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় হত্যা, ছিনতাই, নারী ও শিশু নির্যাতন, অস্ত্র, মাদকসহ মোট ১৬টি মামলা রয়েছে। সবশেষ গত ৭ নভেম্বর একটি ছিনতাই মামলায় আশিককে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়।

বৃহস্পতিবার (২৩ ডিসেম্বর) রাতে ওই নারীর স্বামী বাদী হয়ে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় মামলা করেন। আশিকুল ইসলামসহ এজাহারে চারজনের নাম উল্লেখ করা হয়। এছাড়া তিনজনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়। এজাহারভুক্ত অন্য আসামিরা হলেন - আশিকের দুই সহযোগী ইস্রাফিল খুদা ওরফে জয় ও মেহেদী হাসান ওরফে বাবু এবং রিসোর্টের ব্যবস্থাপক রিয়াজ উদ্দিন। এর মধ্যে রিয়াজ উদ্দিনকে আটক করেছে র‍্যাব। ঘটনার পর থেকে মামলার অন্য আসামিরা আত্মগোপনে আছেন। সন্ত্রাসী আশিকের সঙ্গে রিয়াজের চেনাজানা ও বন্ধুত্ব রয়েছে।

শুক্রবার সকালেও শহরের বাহারছড়ার বাড়িতে গিয়ে আশিককে পাওয়া যায়নি। আশিকের মা ও ছোট ভাই বাবুল বলেন, বুধবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে আশিক বাসায় এসেছিলেন। কিছুক্ষণ পর একটি ফোন পেয়ে বেরিয়ে যান। এরপর থেকে তিনি বাড়িতে ফেরেননি।

এ ব্যাপারে কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি শেখ মুনীর উল গীয়াস জানান, আসামিদের ধরতে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।

ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ওই নারী ও তার স্বামীকে দীর্ঘক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তিনি বলেন, আড়াই মাসে ওই নারী বেশ কয়েকবার কক্সবাজারে এসেছেন। এর আগে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় তিনি অভিযোগ করেছিলেন, তার স্বামীর টাকাপয়সা ও মোবাইল ফোন চুরি হয়ে গেছে। দেড় থেকে দুই মাস আগে ওই নারী ৯৯৯ নম্বরে কল দিয়ে বলেছিলেন, তিনি (নারী) বিপদে পড়েছেন, আক্রমণের শিকার হতে পারেন, তাই তার সাহায্য দরকার। কিন্তু স্থানীয় পুলিশ তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পায়নি। তখন তাদের চলে যেতে বলা হয়েছিল, কিন্তু তারা চলে না গিয়ে এখানে অবস্থান করছেন। কেন অবস্থান করছেন, কারো সঙ্গে তাদের শত্রুতা আছে কি না, এসব পর্যালোচনা করে দেখা হচ্ছে।

বুধবার ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর ৯৯৯ নম্বরে ওই নারী কল দিয়ে সাহায্য পাননি বলে অভিযোগ উঠেছে। এ প্রসঙ্গে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, এ কথা সত্য নয়। ওই নারীর কল দেয়ার কোনো প্রমাণ মেলেনি। কল দিলে অবশ্যই পুলিশের সাড়া মিলত।

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ওই নারী দাবি করছেন তিনি পর্যটক হিসেবে কক্সবাজারে ভ্রমণে এসেছেন। কিন্তু তারা আসলে পর্যটক কি না, সেটা নিশ্চিত করে বলতে সময় লাগবে। তবে তারা গত তিন মাসে একাধিকবার এখানে এসেছেন, সেটা নিশ্চিত।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার সকালে ঢাকা থেকে স্বামী ও আট মাসের সন্তানকে নিয়ে ওই নারী কক্সবাজারে বেড়াতে যান। বিকেলে স্বামী ও সন্তানের সঙ্গে ওই নারী সৈকতের লাবণী পয়েন্টে ঘুরতে যান। বালুচর দিয়ে হেঁটে পানির দিকে নামার সময় এক যুবকের সঙ্গে ওই নারীর স্বামীর ধাক্কা লাগে। এ নিয়ে কথা-কাটাকাটির জেরে সন্ধ্যায় ওই নারীকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে তুলে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। এরপর একটি ঝুপড়ি চায়ের দোকানে নিয়ে তিনজন ওই নারীকে ধর্ষণ করে। তারপর একটি রিসোর্টে নিয়ে স্ত্রীকে আটকে রাখা হয়। পরে দুর্বৃত্তরা কক্ষের দরজা বাইরে থেকে বন্ধ করে চলে যায়। এসব ঘটনা যেন কাউকে না জানানো হয়, তা নিয়ে ভয়ভীতিও দেখানো হয়।

পরে ওই নারী এক ব্যক্তির সহায়তায় দরজার লক খোলেন। তখন তিনি জাতীয় জরুরি সেবা নম্বরে (৯৯৯) কল দেন। সেখান থেকে বলা হয় থানায় গিয়ে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করার জন্য। তারপর এক ব্যক্তির সহযোগিতায় তিনি কল দেন র‍্যাব-১৫-তে। পরে র‍্যাব ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাকে উদ্ধার করে।

তবে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুহাম্মদ মহিউদ্দিন আহমেদ সংবাদমাধ্যমকে বলেন, যেখান থেকে অপহরণের কথা উঠেছে সেখানে সন্ধ্যার দিকে প্রচুর জনসমাগম থাকে। তাছাড়া ওখানে সবসময় ট্যুরিস্ট পুলিশের জোরদার টহল রয়েছে। ফলে ঘটনাটি বেশ রহস্যজনক।

এদিকে একটি গণমাধ্যমের অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, যে হোটেলে ওই নারীকে নিয়ে যাওয়া হয়, সেই জিয়া গেস্ট ইনের রেজিস্টার খাতার তথ্য অনুসারে, ওই নারীকে নিয়ে আশিক বুধবার রাত ৯টা ৮ মিনিটে হোটেলে আসেন। খাতায় দুজনের নাম এন্ট্রি করার পর তাদের তৃতীয়তলার ২০১ নম্বর কক্ষ দেয়া হয়।

সে সময় হোটেল ম্যানেজারের দায়িত্বে ছিলেন রিয়াজ উদ্দিন ছোটন। তাকে বুধবার গভীর রাতে আটক করে র‌্যাব। র‌্যাবের দাবি, আশিকের সঙ্গে ছোটনের আগে থেকেই সখ্য ছিল।

ওই নারীকে হোটেলে নিয়ে যাওয়া এবং বেরিয়ে যাওয়ার সময় লবির সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, হোটেলে যাওয়ার প্রায় ৪০ মিনিট পর রাত ৯টা ৪৫ মিনিটের দিকে বেরিয়ে যাচ্ছেন আশিক। তার কিছু সময় পর একাকী নেমে আসেন ওই নারী।

হোটেলের গেট বাইরে থেকে বন্ধ করা প্রসঙ্গে জিয়া গেস্ট ইনের আরেক ম্যানেজার আমির হোসেন দাবি করেন, তাদের হোটেলের দরজা বাইরে থেকে বন্ধ করা সম্ভব নয়। এটি শুধু ভেতর থেকে বন্ধ করা যায়। ওই নারীকে উদ্ধারের জন্য বাইরে থেকে কোনো যুবক হোটেলে প্রবেশ করেননি বলেও তিনি দাবি করেন। এছাড়া কক্ষ ভাড়া নেয়ার সময় আশিকসহ দুজনকেই ‘স্বাভাবিক’ বলে মনে হয়েছে বলে জানিয়েছেন হোটেলকর্মীরা।

তবে যত তথ্যই আসুক না কেন ‘ধর্ষণে’র বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত চলছে বলে জানান ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মহিউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, মেয়েটির পেছনের বিষয় সম্পর্কে আমরা অনেকটা নিশ্চিত হয়ে গেছি। তবে ধর্ষণের বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টাও অব্যাহত রয়েছে।