ঢাকা Friday, 29 March 2024

তিস্তার পানি বেড়ে লালমনিরহাটে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত, জনদুর্ভোগ

লালমনিরহাট প্রতিনিধি

প্রকাশিত: 00:58, 20 August 2021

তিস্তার পানি বেড়ে লালমনিরহাটে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত, জনদুর্ভোগ

ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে লালমনিরহাটে তিস্তা নদীর পানি বেড়ে বিপদসীমার ১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে লালমনিরহাট জেলার নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার মানুষ। 

গত দুদিনে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) সকাল ৬টা থেকে নদীর পানি বেড়ে ১৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকে এবং বিকেলে তা বেড়ে ১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত  হচ্ছিল।

ভারতের সিকিম উপত্যকা থেকে সৃষ্ট তিস্তা নদী ভারত হয়ে লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। উজানে ভারতের অংশে দেশটির সরকার তিস্তা নদীতে বাঁধ নির্মাণ করেছে। ফলে শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশ অংশে কোনো পানি থাকে না। কিন্তু বর্ষাকালে অতিবর্ষণের কারণে ভারত বাঁধ খুলে দিলে বাংলাদেশ অংশে ভয়াবহ বন্যা ও তীব্র ভাঙনের মুখে পড়ে লালমনিরহাটের ৫টি উপজেলাসহ নীলফামারী, রংপুর, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলা।

বুধবার (১৮ আগস্ট) রাত থেকে তিস্তা নদীতে বাংলাদেশ অংশে পানিপ্রবাহ বেড়েছে। ফলে দুই কূল উপচেপড়া পানি ঢুকে পড়েছে লোকালয়ে। এতে তিস্তা নদীর বাম তীরে লালমনিরহাটের ৫টি উপজেলার কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। 

একদিকে নদীর পানি বৃদ্ধি, অন্যদিকে নদীভাঙনের কবলে পড়ে দিশেহারা জেলার সিন্দুনা, মহিষখোচা ও গোকুন্ডা ইউনিয়নের নদীপাড়ের শতশত মানুষ। অনেকেই শেষ সম্বল আবাদি জমি, গাছপালা নদীতে বিলীন হওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে।

দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ ডালিয়া পয়েন্টের বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র জানায়, গত এক সপ্তাহ ধরে তিস্তার ডালিয়া পয়েন্টে পানি ওঠানামা করছিল। দুদিন ধরে পানি কিছুটা কমলেও গতকাল থেকে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে। তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যারাজ রক্ষার্থে সব গেট খুলে দিয়ে পানিপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করছে ব্যারাজ কর্তৃপক্ষ। এতে ব্যারাজের ভাটিতে নদী তীরবর্তী বেশকিছু গ্রাম তলিয়ে গেছে।

সিন্দুনা ইউনিয়নের চরাঞ্চলের আব্বাস মিয়া ও আজিজার রহমান বলেন, সন্ধ্যার পর থেকে ঘোলা পানি আসছে। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পানি আরো বাড়ছে। গ্রামের অধিকাংশ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছি। করোনা, নদীভাঙন ও  বন্যার পানিতে চরম দুর্ভোগের মধ্যে দিন কাটাতে হচ্ছে।

মহিষখোচা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড সদস্য আব্দুল মজিদ জানান, তার ওয়ার্ডের প্রায় ৩ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এছাড়া নদীভাঙনের কারণে অনেকে বাড়িঘর অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে। অনেকের শেষ সম্বল আবাদি জমি নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। 

তিনি বলেন, আমার এলাকার মানুষজন ত্রাণ চায় না। এলাকার মানুষের একটাই দাবি, ভাঙনরোধে বাঁধ নির্মাণ। 

হাতীবান্ধা উপজেলার সিন্দুনা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নুরুল আমিন জানান, তিস্তার প্রবল ভাঙনে এ পর্যন্ত ৫০টি বাড়ি, আবাদি জমিসহ প্রায় এক কিলোমিটার জায়গা নদীতে চলে গেছে। ভাঙনের কবলে রয়েছে চর চিলমারী গ্রামটি। এছাড়া সেখানে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কমিউনিটি ক্লিনিক যে কোনো সময় নদীতে বিলীন হয়ে যেতে পারে।

তিস্তা ব্যারাজের পানি পরিমাপ শাখার কর্মকর্তা নুর ইসলাম বলেন, ভারত থেকে প্রচণ্ড গতিতে পানি বাংলাদেশের দিকে ধেয়ে আসছে। তিস্তা ব্যারাজের সব গেট খুলে দিয়ে পানির চাপ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আর কী পরিমাণ পানি আসবে তা ধারণা করা যাচ্ছে না।

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান জানান, নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে এবং যেসব এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে সেসব এলাকায় ভাঙনরোধে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে।

লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক আবু জাফর  বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে নদীপাড়ের মানুষের সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। বর্ন্যাতদের জন্য ত্রাণ মজুদ রয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।