ঢাকা Friday, 29 March 2024

বগুড়ায় হামলার পাল্টাপাল্টি অভিযোগ সংসদ সদস্য ও চেয়ারম্যানের

সারাদেশ ডেস্ক

প্রকাশিত: 02:45, 22 September 2022

আপডেট: 02:47, 22 September 2022

বগুড়ায় হামলার পাল্টাপাল্টি অভিযোগ সংসদ সদস্য ও চেয়ারম্যানের

বগুড়া-৭ (গাবতলী-শাজাহানপুর) আসনের সংসদ সদস্য রেজাউল করিম বাবলু এবং শাজাহানপুর উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সোহরাব হোসেন ছান্নু একে অন্যের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ করেছেন। 

সংসদ সদস্য বলছেন, চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন দলবলসহ তার ওপর হামলা চালিয়েছিলেন। এতে তার ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস) আহত হয়েছেন। অন্যদিকে চেয়ারম্যানের অভিযোগ, তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে তার দিকে পিস্তল তাক করেছিলেন সংসদ সদস্য রেজাউল করিম বাবলু।

বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শাজাহানপুর উপজেলা পরিষদ ভবনের দ্বিতীয়তলায় পুলিশের উপস্থিতিতে সংসদ সদস্য ও চেয়ারম্যানের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সেই সংঘর্ষের একটি ভিডিও ক্লিপ এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে একটি অংশে দেখা যায় নিজের ব্যক্তিগত পিস্তল হাতে বারান্দার এক কোণে দাঁড়িয়ে আছেন সংসদ সদস্য রেজাউল করিম বাবলু। 

উপজেলা পরিষদ সূত্রে জানা যায়, বুধবার সকালে আসন্ন দুর্গোৎসবের নিরাপত্তা বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা ডাকা হয়। সংসদ সদস্য রেজাউল করিম বাবলু এবং উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন ছান্নু এই কমিটির উপদেষ্টা। কমিটির সভাপতি ও শাজাহানপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসিফ আহমেদের আমন্ত্রণে সভায় যোগ দিতে সকাল ১০টার দিকে পরিষদে যান সংসদ সদস্য। 

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, রেজাউল করিম বাবলু তার ব্যক্তিগত সহকারী ও শ্যালক রেজাউল করিম ওরফে রেজা, গাড়িচালক শামিম, অফিস সহকারী সামিউলসহ কয়েকজনকে নিয়ে প্রথমে ইউএনওর কক্ষে যান। এ সময় ইউএনও সভায় ছিলেন। ইউএনওকে না পেয়ে তিনি সঙ্গীদের নিয়ে উপজেলা পরিষদের বারান্দায় দাঁড়িয়েছিলেন। সে সময় তাকে দেখেই তেড়ে যান উপজেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আলমগীর বাদশা। তিনি দাবি করেন, প্রকল্প দেয়ার কথা বলে সংসদ সদস্য টাকা নিয়েছেন। একপর্যায়ে সংসদ সদস্যের শ্যালক ও ব্যক্তিগত সহকারী রেজা তর্কে জড়িয়ে পড়েন। তখন দুপক্ষের মধ্যে হাতাহাতি ও মারামারি হয়। 

উপজেলা চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন সেখানে গিয়ে যুবলীগ নেতাদের পক্ষ নিলে সংসদ সদস্যের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়। একপর্যায়ে সংসদ সদস্য রেজাউল করিম পকেট থেকে পিস্তল বের করেন। পরে শাজাহানপুর থানা পুলিশের পাহারায় উপজেলা পরিষদ ছেড়ে যান সংসদ সদস্য রেজাউল করিম বাবলু।

এ বিষয়ে চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেনের অভিযোগ, সংসদ সদস্য রেজাউল করিম বাবলুর শ্যালক ও তার (ব্যক্তিগত সহকারী) পিএস রেজা বিভিন্ন প্রকল্প দেয়ার কথা বলে যুবলীগ নেতাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন। দীর্ঘদিনেও সেই প্রকল্প না দিয়ে টালবাহানা করছিলেন।

তিনি আরো বলেন, বুধবার সকালে উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় যোগ দেয়ার জন্য সংসদ সদস্য উপজেলা পরিষদে আসেন। এ সময় তার পিএস রেজাকে পেয়ে যুবলীগ নেতারা টাকা ফেরত চান। এ নিয়ে হট্টগোল শুরু হলে আমি থামানোর জন্য এগিয়ে যাই। তখন সংসদ সদস্য রেজাউল করিম বাবলু তার ব্যক্তিগত পিস্তল বের করে হত্যার উদ্দেশ্যে তাক করেন। খবর পেয়ে দ্রুত পুলিশ ও পরিষদের লোকজন এগিয়ে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। 

অন্যদিকে হত্যার হুমকি দেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে রেজাউল করিম বাবলু জানান, তিনি আত্মরক্ষার্থে লাইসেন্স করা ব্যক্তিগত পিস্তল বের করেছিলেন। 

সংসদ সদস্য বলেন, আমি সংসদ সদস্য হিসেবে উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির উপদেষ্টা। বুধবার আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় যোগ দেয়ার জন্য উপজেলা পরিষদে যাই। সভাকক্ষে প্রবেশের আগে আমি ইউএনওর সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য তার কক্ষের সামনে অপেক্ষা করছিলাম।
এ সময় উপজেলা চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন ছান্নু ও উপজেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক বাদশা আলমগীরের নেতৃত্বে যুবলীগ নেতাকর্মীরা হামলা চালায়। হামলায় আমার ব্যক্তিগত সহকারী রেজা গুরুতর আহত হন। আমি আত্মরক্ষার্থে আমার লাইসেন্স করা ব্যক্তিগত পিস্তল বের করি।

প্রকল্প দেয়ার নামে যুবলীগ নেতাদের কাছ থেকে টাকা নেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, কে কার কাছ থেকে টাকা নিয়েছে সে বিষয় নিয়ে তো আমার কাছে অভিযোগ দেয়ার সুযোগ ছিল। কিন্তু তা না করে উপজেলা চেয়ারম্যানের মতো দায়িত্বশীল পদে থেকে সংসদ সদস্যের ওপর হামলা মেনে নেয়া যায় না।

তিনি আরো বলেন, সংসদ সদস্যের ওপর হামলা করা হয়েছে। এখন প্রকৃত ঘটনা আড়াল করার চেষ্টা চলছে। সভায় যেন যোগ দিতে না পারি, এ কারণে আমার ওপর হামলা হয়েছে। কারণ আমি সভায় থাকলে উপজেলা চেয়ারম্যানকে চেয়ার ছেড়ে দিতে হবে, তার খবরদারি কমে যাবে।

এদিকে উপজেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আলমগীর বাদশার দাবি, তিনি উপজেলার সাজাপুর ঈদগাহ মাঠ কমিটির সাধারণ সম্পাদক। ঈদগাহ মাঠের উন্নয়নের জন্য তিনি ২০১৯ সালে সংসদ সদস্যকে ৩ লাখ ৯৫ হাজার টাকা ঘুষ দেন। এই টাকার বিনিময়ে প্রতি অর্থবছরে প্রকল্প পাইয়ে দেয়ার কথা ছিল সংসদ সদস্যের। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে তিনি তিন লাখ টাকার প্রকল্প দিয়েছেন। বাকি ৯৫ হাজার টাকা দিতে টালবাহানা করে আসছিলেন। বুধবার সকালে উপজেলা পরিষদে হঠাৎ সংসদ সদস্যের দেখা পেয়ে তিনি টাকা ফেরত চান। তখন তার ওপর হামলার ঘটনা ঘটে।

এ বিষয়ে শাজাহানপুর থানার ওসি আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ওই সভায় পরিদর্শক (তদন্ত) আবদুর রউফ  ছিলেন। সেখানে কী ঘটেছে, সেটা তিনিই ভালো বলতে পারবেন। 

আবদুর রউফ বলেন, আমি সভায় ছিলাম। বাইরের খবর জানি না। ওসি স্যার এসে এমপি মহোদয়কে সঙ্গে করে থানায় নিয়ে গেছেন।

এদিকে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের দিকে ‘পিস্তল তাক করে হত্যার হুমকি দেয়ার প্রতিবাদে’ দুপুরে উপজেলা আওয়ামী লীগের একাংশ প্রতিবাদ মিছিল ও সমাবেশ করে।