ছবি সংগৃহীত
এমভি অভিযান-১০ লঞ্চের ইঞ্জিন রুমে ত্রুটি খুঁজে পেয়েছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি। কিন্তু এই কারণেই লঞ্চটিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে কি না সে বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলেননি তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব মো. তোফায়েল ইসলাম।
শনিবার (২৫ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আগুন লাগা লঞ্চটির পরিদর্শনে যায় তদন্ত কমিটি। দীর্ঘ সময় তারা নৌযানটির ইঞ্জিনরুমসহ সবকিছু ঘুরে দেখেন এবং প্রত্যক্ষদর্শীসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেন।
পরে দুপুরে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক মো. তোফায়েল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি সরেজমিন পুড়ে যাওয়া লঞ্চ ও দুটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। তিনি বলেন, আমাদের এখানে যে অভিজ্ঞতা হলো তা কাজে লাগিয়ে বলতে পারব কী কারণে এ ঘটনা ঘটেছে।
ইঞ্জিন রুমের ত্রুটির বিষয়ে তিনি বলেন, লঞ্চের ইঞ্জিন রুমে কিছু ত্রুটি আমরা পেয়েছি। সেটা কী এবং কেন হয়েছে, তার লিংকআপ করতে হবে। কারণ প্রাথমিকভাবে যা পেয়েছি সেটাকে লিংকআপ না করে মূল সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারব না। অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা ছিল কি না, সেটাও আমরা খতিয়ে দেখছি। কমিটির প্রতিবেদনে সবকিছু উল্লেখ করা হবে।
যাত্রীরা অভিযোগ করেছেন লঞ্চটিতে চালক ছিল না - এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ড্রাইভার (চালক) ছিল কি, ছিল না, তা আমরা খতিয়ে দেখছি। কাগজ-কলমে মিলিয়ে বাস্তবেও যাচাই করে দেখা হবে।
এছাড়া প্রথম যে স্থানে লঞ্চটি থামানোর জন্য গিয়েছিল সেখান থেকে অন্য স্থানে আসার কারণ বিষয়ে তিনি বলেন, পুরো বিষয়গুলো আমরা যাচাই করছি। প্রথম যে স্থানে লঞ্চটি গিয়েছিল সেখানকার স্থানীয় ইউপি সদস্য এবং ঘাটে লাগার পর যারা উদ্ধার কাজে এগিয়ে এসেছিলেন, তাদের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে।
অগ্নিকাণ্ড ও হতাহতের ঘটনার পেছনে প্রাথমিক কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে মো. তোফায়েল ইসলাম বলেন, যেহেতু আমি তদন্ত কমিটির একজন সদস্য এবং আহ্বায়ক, তাই এ মুহূর্তে অন্য সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা না করে কিছু বলতে পারি না। সবাই একসঙ্গে বসে কমপাইল করে সিদ্ধান্তে আসব।
তিন কার্যদিবসের মধ্যে কমিটির প্রতিবেদন দেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, কমিটি গঠনের পর আজ আমরা সবাই ঢাকা থেকে এখানে এসেছি। আমাদের হাসপাতালে এবং বরগুনা যেতে হবে। এছাড়া আরো অনেকের সঙ্গে কথা বলা প্রয়োজন। সব মিলিয়ে যথাসময়ে প্রতিবেদন দেয়ার চেষ্টা করবো।
লঞ্চে অতিরিক্তি যাত্রী ছিল কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঘাটের কাগজপত্রে লঞ্চে ৩১০ জনের মতো যাত্রী ছিল। কিন্তু স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে মনে হচ্ছে যাত্রী আরো বেশি ছিল। স্থানীয় মানুষ যারা সহায়তায় এগিয়ে এসেছিলেন, তাদের কেউ বলছেন, দেড়শ যাত্রী এখানে নেমেছেন, আবার কেউ বলছেন, দুইশ মানুষ ওখানে নেমেছেন, অর্থাৎ একেক জন একেক রকম কথা বলছেন। সেক্ষেত্রে আমার ধারণা, যাত্রী ৩১০-এর বেশি হতে পারে।
লঞ্চ কর্তৃপক্ষের কাউকে পাননি উল্লেখ করে মো. তোফায়েল ইসলাম বলেন, মাস্টার ও ড্রাইভারের নম্বর সংগ্রহ করা হয়েছে। সেগুলো বন্ধ রয়েছে। মালিকের মোবাইল নম্বরও বন্ধ পেয়েছি।
এদিকে তদন্ত কমিটি লঞ্চটি পরিদর্শনকালে অন্য লঞ্চের চালকদেরও সহায়তা নেন। তেমনি এক লঞ্চচালক জানান, ইঞ্জিনের স্যালেন্ডারের হেডের ফায়ারিং কডে একটু ত্রুটি পাওয়া গেছে। আরেক চালক জানান, স্যালেন্ডারের হেডে প্রচুর হিট হয়। ওভার হিটের সময় সেখান থেকে কোনোভাবে আগুনের ফুলকি বের হলেই দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তবে এসব সমস্যা দেখার জন্য ড্রাইভার-গ্রিজারদের সেখানে থাকার কথা। এগুলো মিটারের পাশাপাশি শব্দের মাধ্যমেও বোঝা সম্ভব।