ঢাকা Thursday, 25 April 2024

ঠাকুরগাঁওয়ে আগরের নির্যাসে সম্ভাবনার আলো জ্বালছেন শরিফ 

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

প্রকাশিত: 21:42, 19 February 2022

ঠাকুরগাঁওয়ে আগরের নির্যাসে সম্ভাবনার আলো জ্বালছেন শরিফ 

নির্যাস সংগ্রহের প্রক্রিয়ায় ব্যস্ত শরিফ

বাংলাদেশে আগর-সুগন্ধির ব্যবহার অতিপরিচিত। ধর্মীয়সহ বিভিন্ন আয়োজনে আগরের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। কিন্তু দেশে এই গাছের চাষ ও নির্যাস সংগ্রহের উদ্যোগ নেই বললেই চলে। অপ্রচলিত কিন্তু দামি এই আগরেই সম্ভাবনার আলো জ্বালছেন ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ইয়াকুবপুর গ্রামের শরিফ বিন রব্বানী। 

উল্লেখ্য, সুগন্ধিদ্রব্য আগরের চাহিদা ব্যাপক। বাংলাদেশের সিলেট ও চট্টগ্রামে আগরগাছ দেখা গেলেও তা সংখ্যায় অতিনগণ্য। আগর চাষ ও এর গাছ থেকে নির্যাস সংগ্রহ পদ্ধতিও অনেকের জানা নেই। তবে এই গাছের নির্যাস অত্যন্ত দামি। 

শরিফের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শখের বশে ২০১০ সালে সিলেট থেকে শতাধিক আগরগাছের চারা নিয়ে আসেন তিনি। পরে নিজ বাড়ির পাশে গড়ে তোলেন আগর বাগান। 

গাছগুলো একটু বড় হলে জৈব পদ্ধতিতে নির্যাস সংগ্রহ শুরু করেন শরিফ। তার অভিমত, এ পদ্ধতিতে রস সংগ্রহ করলে আগরের মান ঠিক থাকে। 

শরিফের আগর বাগানের কিয়দংশ

শরিফের বাগানে বর্তমানে ২ শতাধিক আগরগাছ রয়েছে। আগর চাষ সম্প্রসারণের লক্ষ্যে গাছের চারাও উৎপাদন করছেন তিনি। 

জানা গেছে, সাধারণত আগরের রস সংগ্রহের জন্য গাছে লোহার পেরেক গেঁথে ও ড্রিল করে ফুটো করে রাসায়নিক কীট ঢুকিয়ে ছত্রাক তৈরি করা হয়, যা বেশ ব্যয়সাপেক্ষ। 

তবে শরিফ এ পদ্ধতিতে নির্যাস সংগ্রহের পক্ষপাতী নন। তার দাবি, এ পদ্ধতিতে আগরের মান ঠিক থাকে না। রসে আয়রন ও রাসায়নিক মিশ্রণ পাওয়া যায়। 

তাহলে কিভাবে আগরের নির্যাস সংগ্রহ করেন - জানতে  চাইলে শরিফ বলেন, বিশেষ প্রক্রিয়ায় ছত্রাক তৈরি করি। এরপর ওই ছত্রাক বাঁশের কাঠির মাধ্যমে কম ছিদ্র করে আগরগাছের ভেতর ঢুকিয়ে দিই। পরে এ ছত্রাকের বংশবৃদ্ধি যত হয়, ততই আগরের নির্যাস পাওয়া যায়। 

তিনি আরো বলেন, এই পদ্ধতিতে আগরের রস সংগ্রহ করা হলে মান ঠিক থাকবে।

বাগান পরিদর্শনকালে শরিফ বলেন, অন্যান্য গাছের তুলনায় আগর গাছের বাগান করা সহজ, খরচ তুলনামূলক কম এবং লাভ অনেক বেশি। এক কেজি আগর আতরের দাম পাঁচ লাখ টাকার কাছাকাছি। এটি একটি সম্ভাবনাময় ফসল। আগরগাছের নির্যাস থেকে মূল্যবান সুগন্ধি ও তেল পাওয়া যায়, যা থেকে আতর, আগরবাতি, বডি স্প্রেসহ বিভিন্ন ধরনের সুগন্ধিপণ্য তৈরি করা হয়। আগরগাছের কাঠ ওষুধ কারখানার কাঁচামাল হিসেবেও ব্যবহার হয়।

শরিফের আগর সংগ্রহের কাজে সহযোগিতা করেন তার স্ত্রী রোজিনা আকতার। তিনি বলেন, আগর ব্যবসায়ীরা যদি ন্যায্যমূল্যে আগরগাছ কেনাসহ সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পান, তবে আগর শিল্পের মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে, পাশাপাশি দেশের সুষম অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্যও তা সহায়ক হবে।

শরিফের প্রচেষ্টা ও আগর উৎপাদন বিষয়ে ঠাকুরগাঁও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আবু হোসেন বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে আগর আতরের প্রচুর চাহিদা। ফলে সম্ভাবনাময় আগর চাষ করে বদলে যেতে পারে এ জেলার মানুষের ভাগ্য।

শরিফের এই উদ্যোগকে অত্যন্ত সময়োপযোগী ও সম্ভাবনাময় উল্লেখ করে তিনি বলেন, আগর চাষে আগ্রহীদের সরকারিভাবে কারিগরি সহযোগিতা দেয়া হবে।